আড়াই ফুট উচ্চতা, বয়স ৪২ বছর, দাম ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা
আড়াই ফুট উচ্চতার উদ্ভিদটির নাম ‘ফাইকাস গ্রিন আইল্যান্ড’। দেশীয়ভাবে এটি ‘চায়নিজ বট’ নামেও পরিচিত। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এই বনসাইয়ের বয়স ৪২ বছর। আর দাম—১ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
চট্টগ্রাম নগরের সিআরবি এলাকায় আয়োজিত বৃক্ষমেলায় বনসাইটি এনেছেন শৌখিন বাগানি মোহাম্মদ আত-তাওয়াবুল ইসলাম। আরও বেশ কয়েকটি বনসাই নিয়ে মেলায় এসেছেন তিনি। এখন পর্যন্ত মেলায় আসা সবচেয়ে দামি গাছ এটি।
মূলত পরিবার থেকেই বনসাইয়ের প্রতি ভালো লাগা শুরু। ২০০৫ সাল থেকে তিনি বনসাই নিয়ে কাজ করছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন শৌখিন গাছও রয়েছে তাঁর স্টলে। আজ মঙ্গলবার মেলায় কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, মূলত বয়সের কারণেই গাছটির দাম বেশি। এটির পাশাপাশি চামেলি ও তেঁতুলের বনসাই আছে। সেগুলোর দাম ২০ হাজার ও ৫০ হাজার টাকা।
সোমবার চট্টগ্রাম নগরের সিআরবি শিরীষতলায় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলার আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আয়োজিত এবারের মেলায় প্রতিপাদ্য বিষয়, ‘গাছ লাগিয়ে যত্ন করি, সুস্থ প্রজন্মের দেশ গড়ি’। এ মেলায় ৭৩টি নার্সারি ও চারা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। মেলা চলবে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত।
মেলার প্রতিপাদ্য বিষয় ‘গাছ লাগিয়ে যত্ন করি, সুস্থ প্রজন্মের দেশ গড়ি’। এ মেলায় ৭৩টি নার্সারি ও চারা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। মেলা চলবে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত।
মঙ্গলবার সকালে মেলা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি স্টলেই সাজিয়ে রাখা আছে ফলদ, বনজ, ঔষধিসহ নানা প্রজাতির চারা। দেশীয় সবজি ও ফলের চারাও রয়েছে মেলায়। ২০ টাকা থেকে শুরু করে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার পর্যন্ত গাছ রয়েছে মেলায়। এ ছাড়া দেশীয় ফুল, ফল ও সবজির চারা পাওয়া যাচ্ছে ২০ থেকে এক হাজার টাকায়। শৌখিন গাছগুলো পাওয়া যাচ্ছে ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকায়।
মেলায় ঢুকতেই চোখে পড়বে নানা রঙের ফুল। সারি বেঁধে প্রতিটি স্টলের সামনে রাখা গাছগুলোতে ফুল ও ফল ঝুলে আছে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে অনেকেই এসেছেন বাগানের জন্য ফুল কিনতে। পাশাপাশি মেলায় রয়েছে অ্যাডেনিয়াম, থাই কাঠগোলাপ, অর্কিড, বিভিন্ন প্রজাতির ক্যাকটাস, লাকি ব্যাম্বুসহ বিভিন্ন শৌখিন গাছ। গাছ ও চারা বিক্রির পাশাপাশি মেলায় বাগান-সম্পর্কিত তথ্যও প্রদান করছেন দোকানিরা। অনেকেই চারা কেনার পাশাপাশি জেনে নিচ্ছেন পরিচর্যার নিয়ম।
মেলায় আগত দুই শিক্ষার্থী তিশা দাশ ও বৃষ্টি দে বলেন, ফুলের গাছ পছন্দ তাঁদের। তাই ফুলের চারা কিনতে মেলায় এসেছেন। পাশাপাশি গাছগাছালির সঙ্গে ছবিও তুলছেন।
কথা হলো, মেলায় আসা গৃহিণী সায়িদা বেগম বলেন, ছাদে ও বারান্দায় ছোট একটি বাগান আছে তাঁর। বাগানের জন্য ফুলের চারা কিনেছেন। বারান্দার গ্রিলের সঙ্গে ঝোলানোর জন্য কিছু টব ও অর্কিড কিনেছেন।
মেলায় কিছুটা ব্যতিক্রমী আলওয়ান মধু জাদুঘর ও গবেষণা কেন্দ্রের স্টলটি। মেলাজুড়ে মিঠাপানির গাছ থাকলেও তাঁদের স্টলে রয়েছে নোনাপানি সহনীয় গাছের চারা। সুন্দরী, কাঁকড়া, কেওড়াসহ সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে তাঁদের স্টলে। এসব গাছের দাম রাখা হয়েছে ২০০ টাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন ফুলের মধুর সংগ্রহ রয়েছে তাঁদের স্টলে। ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে এসব মধু। পাশেই রাখা আছে ছাদবাগানে মধু চাষের উপযোগী মৌমাছি বক্স।
প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার মো. মাইনুল আনোয়ার বলেন, গাছের পরাগায়নে জন্য মৌমাছি গুরুত্বপূর্ণ। সুন্দরবনের উপকূলীয় গাছের পাশাপাশি ছাদবাগানের একটি মৌমাছি পালনের বাক্স রাখার জন্য দর্শনার্থীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম কায়চার প্রথম আলোকে বলেন, মানুষ পরিবেশের প্রতি যত্নশীল হচ্ছে। ছাদবাগানের প্রতিও আগ্রহ বাড়ছে। এবারের মেলায় ৭৩টি স্টলে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও চারা পাওয়া যাচ্ছে। প্রথম দিন থেকেই দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।