২৮ অক্টোবর থেকে ১৮ জানুয়ারি
ঢাকায় বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে ২৬৩ মামলা, তদন্ত শেষ তিনটির
ঢাকায় গত বছরের ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশের দিন এবং পরে হরতাল ও অবরোধের সময় গাড়িতে আগুন, পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও হত্যার অভিযোগে মোট ২৬৩টি মামলা হয়েছে। বেশির ভাগ মামলার আসামি বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী। আর এত মামলার মধ্যে পাঁচ মাসে মাত্র তিনটির তদন্ত শেষ হয়েছে।
এ ছাড়া নির্বাচনের আগে রাজধানীর তেজগাঁও ও গোপীবাগে দুটি ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় হওয়া মামলার তদন্তেও ধীরগতি দেখা গেছে। ট্রেনে আগুনের ঘটনার তিন মাসের বেশি সময় পার হয়েছে। এর মধ্যে মামলার তদন্তের ভার পুলিশের কাছ থেকে সিআইডি ও পিবিআইয়ের কাছে গেছে। তবে তদন্ত এগোয়নি।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) বলছে, ২৮ অক্টোবর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মামলা হয়েছে ২৫৭টি। পরের ১৮ দিনে আরও ৬টি মামলা হয়েছে। মামলাগুলোর বেশির ভাগই ‘চোরাগোপ্তা’ হামলা চালিয়ে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে করা হয়েছে বলছে পুলিশ। ২৮ অক্টোবরের পর ঢাকা মহানগরীতে দেড় শতাধিক গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনাতেই বেশি মামলা হয়েছে। অনেক মামলার আসামি অজ্ঞাত।
ডিএমপি সদর দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, মাত্র তিনটি মামলার তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পল্টন থানার একটি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। দ্রুত বিচার আইনে দায়ের করা কাফরুল থানার একটি ও রূপনগর থানার একটি মামলায় অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। এই মামলা দুটি অগ্নিসংযোগসংক্রান্ত নয়।
২৮ অক্টোবরের পর গাড়িতে আগুন, হামলা, ভাঙচুর ও হত্যার অভিযোগে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি ৬১টি মামলা হয়েছে ডিএমপির মতিঝিল বিভাগে। ওয়ারী বিভাগে মামলা হয়েছে ৫৬টি। মিরপুর বিভাগে ৫১টি।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মতিঝিল বিভাগে করা মামলাগুলোর অধিকাংশই ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ কেন্দ্র করে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যা, পুলিশ হাসপাতালে হামলা এবং গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায়। এসব মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা আসামি।
এ ছাড়া ২৮ অক্টোবরের পর বিএনপির ডাকা হরতাল ও অবরোধের সময় রাজধানীর মিরপুর ও ওয়ারী বিভাগের বিভিন্ন স্থানে গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ কারণে এ দুই এলাকায় বেশি মামলা হয়েছে। অধিকাংশ মামলার আসামি অজ্ঞাত।
এসব মামলার তদন্তে দেরির কারণ হিসেবে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ ঘিরে নাশকতার অভিযোগে বেশি মামলা হয়েছে মতিঝিল বিভাগের পল্টন, মতিঝিল ও শাহজাহানপুর থানায়। এসব মামলায় অজ্ঞাত অনেক আসামি রয়েছে। ওই দিন সারা দেশ থেকে আসা বিএনপির নেতা-কর্মীদের অনেকেই হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের অস্ত্র ছিনতাই, হত্যাসহ নানা অপরাধে জড়িয়েছেন। তাঁদের চিহ্নিত করা এবং নাম-ঠিকানা শনাক্ত করা হচ্ছে। এসব বিষয় নিশ্চিত হলেই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে।
ট্রেনে আগুনের তদন্তে ধীরগতি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজধানীর তেজগাঁও ও গোপীবাগে দুটি ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় হওয়া মামলা শুরুতে ঢাকা রেলওয়ে থানার পুলিশ তদন্ত করছিল। তবে অগ্রগতি না হওয়ায় তেজগাঁওয়ের মামলাটি স্থানান্তর করা হয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি)। আর গোপীবাগের মামলার তদন্তভার পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো আব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
গত ১৯ ডিসেম্বর ভোরে তেজগাঁওয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে মা-শিশুসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছিল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই দিন আগে গত ৫ জানুয়ারি রাতে গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে চারজনের মৃত্যু হয়।
মামলার তদন্তের বিষয়ে ঢাকা রেলওয়ে জেলার পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মামলা দুটির তদন্ত তেমনভাবে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। মামলা দুটি এখন পুলিশের দুটি বিশেষায়িত ইউনিট তদন্ত করছে।
গোপীবাগে ট্রেনে আগুনের বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) আজাদ রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত চলছে।
তেজগাঁওয়ে ট্রেনে আগুনের তদন্তে এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি নেই বলেছেন পিবিআইয়ের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার।