অটোরিকশা নিয়ে বিপাকে থাকার কথা নিজেরাই স্বীকার করল বিআরটিএ

বিআরটিএর সেবা সহজীকরণ–সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীনসহ অন্যরা। আজ ১ জানুয়ারি, রাজধানীর মিরপুর ঢাকা মেট্রো-১ সার্কেলছবি: প্রথম আলো

ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা নির্ধারিত। গত প্রায় ২০ বছরে নতুন কোনো অটোরিকশার অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এতে নির্দিষ্ট কিছু মালিকের কাছে অটোরিকশার মালিকানা চলে গেছে। মালিকেরা চালকদের কাছ থেকে দৈনিক জমার অর্থ বেশি আদায় করছেন। আর চালকেরা পকেট কাটছেন যাত্রীদের। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) আশ্বাস দিয়েছে, এই দৌরাত্ম্য ঠেকাতে দু-এক মাসের মধ্যে অটোরিকশার মিটারে চলাচল নিশ্চিত করতে কঠোর হতে যাচ্ছে সংস্থাটি।

আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর মিরপুর ঢাকা মেট্রো-১ সার্কেলে বিআরটিএর সেবা সহজীকরণ–সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় সিএনজি অটোরিকশার নৈরাজ্যের প্রশ্নটি উঠে আসে। জবাবে বিআরটিএর চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীন এই খাতটি ঠিক করতে দু-এক মাস সময় চাইলেন।

বাজারে একটি অটোরিকশার দাম ৪-৫ লাখ টাকা। কিন্তু একটি অটোরিকশার নিবন্ধন নম্বর হাত বদল হচ্ছে ২০-২৫ লাখ টাকায়। এই নৈরাজ্য সম্পর্কে বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীন বলেন, ‘অটোরিকশার অনেক সংগঠন। এগুলো নিয়ে আমরা খানিকটা বিপাকে পড়েছি। এক পক্ষকে ডাকলে আরেক পক্ষ অভিযোগ তুলে, তাঁদের কেন ডাকলেন না। ফলে সিএনজি অটোরিকশা মিটারে চলা, ভাড়া এবং মালিকের জমার বিষয়টি ঠিক করা যাচ্ছে না।’

মো. ইয়াসীন বলেন, অটোরিকশা রাইড শেয়ারিংয়েও চলছে। ফলে কিছুটা প্রতিযোগিতা এসেছে। তবে এই খাতে নৈরাজ্য বন্ধে আরও কঠোর কিছু করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। দু-এক মাসের মধ্যে সিএনজির মিটারে নির্ধারিত ভাড়ায় চলাচল, নির্ধারিত মালিকের জমা মেনে চলার বিষয়ে আইনিব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজধানী ঢাকায় বাসের দুরবস্থা স্বীকার করে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘রাজধানীর বাসগুলোকে দেখলে বোঝা যায়, এগুলোর কী অবস্থা। এ জন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী মে মাস থেকে সড়কে ২০ বছরের পুরোনো বাস-ট্রাক চলতে দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। এ ছাড়া সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে অভিযান শুরুর পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে যৌথভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। বাসের চালক ও সহকারীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

মতবিনিময় সভায় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ আল লতিফ বলেন, ঢাকার বাসগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। আগামী তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে ঢাকার পরিবহনব্যবস্থায় অনেক উন্নতি দেখা যাবে। গতকালই মালিক সমিতির নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই কমিটি শৃঙ্খলা ফেরাতে সবকিছুই করবে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আবদুর রহিম বক্স বলেন, দেশে মোটরযান চালকদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। পাঠ্যবইয়ে সড়ক দুর্ঘটনা–সম্পর্কিত সতর্কতার বিষয় যুক্ত করতে হবে। বিদেশের সড়কে একটা বিড়ালও ঢুকতে পারেন না। কিন্তু বাংলাদেশে মহাসড়কে যত্রতত্র ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা ঢুকে দুর্ঘটনা বাড়াচ্ছে।

সভার শুরুতে বিআরটিএ থেকে যে ১৬ ধরনের সেবা দেওয়া হয়, তা পাওয়ার পয়েন্টে উপস্থাপনার মাধ্যমে দেখানো হয়। এতে বলা হয়, বিআরটিএতে এখন লাইসেন্স গ্রহণ, নবায়ন, ফিটনেস সনদ প্রদান, মালিকানা বদলিসহ প্রায় সব কাজই বাসায় বসে অনলাইনে করা যাচ্ছে। বিআরটিএ কার্যালয়ে একবার এলেই হয়। আগে প্রতিটি কাজের জন্য ৮-১০ আসতে হতো।

মতবিনিময় সভায় চালকের লাইসেন্স সংকট নিয়ে একাধিক অংশীজন প্রশ্ন তুললে বিআরটিএর চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীন জানান, এখন প্রতিদিন গড়ে সাড়ে চার হাজার লাইসেন্স মুদ্রণ হচ্ছে। অতীতে জমে থাকার কারণে এখনো লাইসেন্স পেতে সমস্যা হচ্ছে। এটি শিগগিরই কেটে যাবে। এ ছাড়া ৫০ হাজারের মতো লাইসেন্স তারা মুদ্রিত করে ডাক বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছেন। বিষয়গুলো আরও দ্রুত করা এবং অনলাইন সেবার বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে প্রচার চালানোর বিষয়ে আশ্বাস দেন তিনি।

মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিআরটিএর পরিচালক (প্রকৌশল) সীতাংশু শেখর বিশ্বাস, পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) নাজনীন হোসেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন বিআরটিএর ঢাকা বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ।