নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকাসহ ৬টি বিষয়ে মতামত এসেছে
গত ২২ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত মেসেঞ্জারে ৪৬ জন, ফেসবুকে ১৮২ জন, ই-মেইলে ১০৯ জন এবং ওয়েবসাইটে ১৮৫ জন মতামত দিয়েছেন।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে সাধারণ মানুষের মতামত নিচ্ছে সংস্কার কমিশন। এখন পর্যন্ত ডিজিটাল মাধ্যমে ৫২২ জনের মতামত পেয়েছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। নির্বাচনপদ্ধতি, নির্বাচনী আইন, নির্বাচনে সরকারি কর্মকর্তার দায়িত্ব এবং পুলিশের ভূমিকাসহ ছয়টি বিষয়ে বেশি মতামত এসেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের প্রায় দুই মাস পর ৩ অক্টোবর নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। এই কমিশন মূলত নির্বাচনসংশ্লিষ্ট আইন-বিধিগুলো পর্যালোচনা করছে। পাশাপাশি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের বিষয়ে মানুষের মতামত নিচ্ছে। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ ও মেসেঞ্জার এবং ই-মেইলে মতামত দেওয়া যাচ্ছে। ২২ অক্টোবর থেকে মতামত নেওয়া শুরু হয়। ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত মতামত দেওয়া যাবে।
উদ্ধৃতি সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোও লিখিত প্রস্তাব দিতে পারবে। তবে কমিশনের সংলাপ করার অবকাশ নেই। কারণ, কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া বা বলার সুযোগ নেই। সংস্কার কমিশনের কাজ হলো নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে সুপারিশ তৈরি করা।বদিউল আলম মজুমদার, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সূত্র জানায়, ২২ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ফেসবুক মেসেঞ্জারে ৪৬ জন, ফেসবুক পেজে ১৮২ জন, ই–মেইলে ১০৯ জন এবং ওয়েবসাইটে ১৮৫ জন তাঁদের মতামত দিয়েছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ সংগঠনের পক্ষ থেকেও মতামত দিয়েছেন। আবার একই ব্যক্তি একাধিক বিষয়েও পৃথকভাবে মতামত পাঠিয়েছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনপদ্ধতি কেমন হওয়া উচিত, সংবিধান ও নির্বাচনী আইনে কোন ধরনের পরিবর্তন দরকার, প্রার্থীদের যোগ্যতাসংক্রান্ত বিধানে পরিবর্তন–সংযোজন আনা, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা, নির্বাচনে সরকারি কর্মকর্তাদের পক্ষপাতহীন দায়িত্ব পালন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত—এই ছয়টি বিষয়ে বেশি মতামত এসেছে। নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে মূলত সরকারের ওপর বিশেষ করে প্রশাসন ও পুলিশের ওপর নির্ভর করতে হয়। সর্বশেষ তিনটি জাতীয় নির্বাচনে পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। বিদ্যমান জাতীয় সংসদ নির্বাচনপদ্ধতির বদলে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনপদ্ধতি চালু করা নিয়ে জনপরিসরে আলোচনা চলছে।
এ বিষয়ে অনেকে মত দিয়েছেন। আবার বিদ্যমান নির্বাচনপদ্ধতি বহাল রাখার বিষয়েও মতামত এসেছে কমিশনের কাছে। কমিশন সূত্র জানায়, ডিজিটাল মাধ্যমে মতামত নেওয়া শেষ হলে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করার চিন্তা আছে। এরপর সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত করবে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসবে না কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলো কী ধরনের সংস্কার চায়, সে বিষয়ে দলগুলোর কাছ থেকে লিখিত মতামত নেওয়া হবে। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রস্তাব জমা দেবে কমিশন। এরপর সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রস্তাব তৈরির ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় পর্যালোচনা করবে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। ইতিমধ্যে সংবিধানের নির্বাচনসংক্রান্ত বিধান, জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সব আইন ও বিধি, নির্বাচনসংক্রান্ত সব ফরম পর্যালোচনা করছে কমিশন।
এ ছাড়া বিদ্যমান নির্বাচনপদ্ধতি পর্যালোচনা ও প্রয়োজনীয় সুপারিশ তৈরি, বর্তমান নির্বাচন পরিচালনা ব্যবস্থা পর্যালোচনা ও সুপারিশ, প্রবাসী ও নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইন ও কারিগরি দিক পর্যালোচনা ও সুপারিশ তৈরি, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ এবং বাংলাদেশে অতীতে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনগুলো মূল্যায়ন করে সেসব নির্বাচনের দুর্বলতা ও শিক্ষণীয় বিষয়গুলো চিহ্নিত করবে কমিশন।
বিভিন্ন দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া পর্যালোচনা এবং শিক্ষণীয় দিকগুলো চিহ্নিত করার কাজও করবে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এ ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের সুপারিশও থাকবে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, মাঠ প্রশাসন ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিবন্ধকের কার্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের লক্ষ্যে প্রস্তাবনা তৈরি করা হবে। এ বিষয়গুলো সংস্কার কমিশনের কার্যপরিধির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা মানুষের অনেক সাড়া পাচ্ছেন। সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোও লিখিত প্রস্তাব দিতে পারবে। একপর্যায়ে হয়তো কিছু কিছু অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
তবে কমিশনের সংলাপ করার অবকাশ নেই। কারণ, কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া বা বলার সুযোগ নেই। সংস্কার কমিশনের কাজ হলো নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে সুপারিশ তৈরি করা।