দুই সপ্তাহ পর বিকল্প পথে সেন্ট মার্টিনে গেল নৌযান

টেকনাফ পৌরসভার কাযুকখালীয়া খাল থেকে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে সার্ভিস ট্রলারছবি: প্রথম আলো

দুই সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর আবারও স্বাভাবিক হতে শুরু কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে বিকল্প পথে সেন্ট মার্টিনে নৌযান চলাচল। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টেকনাফের কায়ুকখালিয়া খাল থেকে তিনটি সার্ভিস ট্রলার শতাধিক যাত্রী, বেশ কিছু চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য নিয়ে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে রওনা দেয়। একইভাবে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সেন্ট মার্টিন থেকে প্রায় ২০০ যাত্রী নিয়ে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের উদ্দেশে রওনা দেয় তিনটি সার্ভিস ট্রলার ও তিনটি স্পিডবোট।

এদিকে বিকল্প পথে নৌযান চলাচল শুরু করলেও টেকনাফ-সেন্ট মার্টিনের নিয়মিত এখনো নৌপথ স্বাভাবিক হয়নি। নিয়মিত নৌপথে এক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে নৌযান চলাচল।

আজ টেকনাফের কায়ুকখালিয়া খাল থেকে রওনা দেওয়া চারটি সার্ভিস ট্রলার হলো এসবি আবরার হাফিজ, এসবি ওসমান গণি ও এসবি রাফিয়া। এর মধ্যে আবরার হাফিজ বেলা আড়াইটায়, ওসমান গনি বেলা ৩টা ২০ মিনিটে সেন্ট মার্টিন জেটিতে পৌঁছায়। বেলা সাড়ে তিনটায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত এসবি রাফিয়া সেন্ট মার্টিনে পৌঁছানোর পথে ছিল।

সেন্ট মার্টিন ছেড়ে আসা তিনটি ট্রলার হলো এসবি সুমাইয়া, এসবি আল্লাহর দান, এসবি আল-নোমান। দুপুর ১২টার আগেই তিনটি ট্রলার শাহপরীর দ্বীপের জেটিতে ভেড়ে।

টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নিয়মিত নৌপথটিতে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে গত ৮ জুন থেকে। এর আগে ৫ ও ৮ জুন ওই নৌপথের নাইক্ষ্যংদিয়া নামক এলাকায় মিয়ানমার সীমান্ত থেকে ট্রলার ও স্পিডবোট লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছিল। এতে কেউ হতাহত না হলেও সাতটি ট্রলারের গায়ে সাতটি গুলি এসে লাগে। এ পরিস্থিতিতে ওই নৌপথে নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে উপজেলা প্রশাসন।

নিয়মিত নৌপথটিতে নৌযান চলাচল বন্ধ হওয়ার পর উপকূলীয় শাহপরীর দ্বীপের বদরমোকামের ‘গোলগরা’ এলাকা দিয়ে নৌযান চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে বিকল্প পথটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় নৌযানের মালিকেরা নৌপথটি ব্যবহারে অনীহা দেখান। ২২ জুনের পর থেকে বিকল্প পথটিতেও নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গত শনিবার পর্যন্ত ওই নৌপথে কোনো নৌযান চলাচল করেনি। এতে দুর্ভোগে পড়েন সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দারা। বিষয়টি নিয়ে গতকাল শনিবার প্রথম আলোর অনলাইনে এবং আজ রোববার ছাপা পত্রিকার চট্টগ্রাম সংস্করণে ‘নৌরুট স্বাভাবিক হয়নি, এখনো বিচ্ছিন্ন সেন্ট মার্টিন’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর আজ সকালে নৌযান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে।

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান ও টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ নৌযান চলাচল শুরু হওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। মুজিবুর রহমান বলেন, বিকল্প নৌপথটিতে সাগর উত্তাল থাকে। যার কারণে পথটিতে ঝুঁকি বেশি। তবে উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে হলেও নৌযান চলাচল করায় কিছুটা হলেও দ্বীপের বাসিন্দারা স্বস্তি পেয়েছেন। টেকনাফ থেকে আসা ট্রলারে দুই শতাধিক গ্যাস সিলিন্ডার এবং খাদ্যপণ্য রয়েছে, যা স্থানীয় মানুষের সংকট কিছুটা হলেও ঘোচাবে।

টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ বলেন, জুন-জুলাই মাসে সাগর বেশি উত্তাল থাকে। তবে আজ সাগর কিছুটা শান্ত দেখা গেছে। তাই ট্রলার চলাচল সম্ভব হয়েছে।

সেন্ট মার্টিন ইউপির সদস্য এবং স্পিডবোট মালিক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, সেন্ট মার্টিন ছেড়ে যাওয়া ৩টি স্পিডবোটে ২৫ জন যাত্রী শাহপরীর দ্বীপে পৌঁছেছেন। নৌপথটিতে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও বিজিবির নজরদারি থাকায় যাত্রীরা এখন অনেকটা নিরাপদ বোধ করছেন।

আজ রোববার সকালে টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালীয়া খালে গিয়ে দেখা যায়, খালের পাড়ে সার্ভিস ট্রলারের টিকিট কাউন্টারে মানুষের ভিড়। সেন্ট মার্টিন যাওয়ার জন্য কিছু নারী-পুরুষ, শিশুসহ শতাধিক মানুষ অপেক্ষা করছে। ট্রলারে চাল, ডাল, ডিম, মুরগি এবং বিভিন্ন ধরনের সবজি ওঠানোর কাজ করছেন ১৫-২০ জন শ্রমিক। কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ায় তাঁদের সংসারে অভাব নেমে এসেছিল। ঈদুল আজহার সময়ও সংকটের মধ্যে দিন গেছে। এখন নৌযান চলাচল করায় তাঁরা খুশি।

কাউন্টারের সামনে কথা হয় সেন্ট মার্টিন বিএন ইসলামিক উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ফেরদৌস আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঈদ ও গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে তিনিসহ ১০ শিক্ষক আটকা পড়েন। নৌযান চলাচল শুরু হওয়ায় এখন সবাই একসঙ্গে কর্মস্থলে ফিরছেন।

সেন্ট মার্টিনের জনপ্রতিনিধিরা জানান, দ্বীপের মানুষ প্রধানত পর্যটন এবং মাছ ধরার ওপর নির্ভরশীল। সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ায় ৭৭২ জন জেলের বেকার সময় কাটছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সেন্ট মার্টিনের জেলেদের জন্য মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার দাবি জানান স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আদনান চৌধুরী বলেন, টেকনাফ-সেন্ট মার্টিনে নৌযান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। রোববার বিকল্প পথে ছয়টি ট্রলার এবং তিনটি স্পিডবোট চলাচল করেছে। পর্যায়ক্রমে বিকল্প পথটিতে নৌযান চলাচল পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারে সংঘাত চলমান থাকায় নিয়মিত নৌপথটির পরিবর্তে বিকল্প পথে চলাচল করার জন্য নৌযানের মালিকদের বলা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।