ইন্টারনেটে সরকারি সেবায় পিছিয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী

  • জরিপে ৪ হাজার ৮০০ জন অংশ নেন, যাঁদের গড় বয়স ২৪ বছর।

  • প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ১৯ শতাংশ মুঠোফোনের মাধ্যমে আর্থিক সেবা নেন।

  • অনলাইন নিরাপত্তার বিষয়ে কোথায় সাহায্য চাইতে হয়, জানেন না ৬০ শতাংশ।

ইন্টারনেট
প্রতীকী ছবি

দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে মুঠোফোন ব্যবহারের সুবিধা থাকলেও বড় একটি অংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না। আর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মাত্র ৫ দশমিক ৭ শতাংশ সরকারি সেবা গ্রহণ করেন। এ ছাড়া ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তিতে নারী-পুরুষ বৈষম্যও রয়েছে।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি মূল্যায়ন করতে টেলিনর, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, গ্রামীণফোন ও প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল নরওয়ের অংশীদারত্বে একটি জরিপ পরিচালিত হয়। ‘ইনক্লুসিভ ডিজিটাল ফিউচার’ শীর্ষক এই ভিত্তি জরিপটি পরিচালনা করা হয় দেশের ১৯টি জেলার আট ধরনের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর গ্রামীণফোনের কার্যালয়ে জরিপের প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। জরিপের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, আটটি প্রত্যন্ত ও সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর জীবনাচরণ, বিভিন্ন প্রতিকূলতা ও তাঁদের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোতে আলোকপাত করা।

এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন জাতিগত এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু, চা–বাগানের শ্রমিক, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, হিজড়া সম্প্রদায়, পথশিশু, বেদে বা নদী অঞ্চলের মানুষ, ছোট শহরের নারী ব্যবসায়ী এবং সারা দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার জনগোষ্ঠী।

জরিপে ৪ হাজার ৮০০ জন অংশ নেন, যাঁদের গড় বয়স ২৪ বছর। অবশ্য হিজড়া সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে বয়সের গড় ২৯ বছর আর নারীপ্রধান পরিবারের নারীদের গড় বয়স ২৮ বছর। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ১৩ দশমিক ৮ শতাংশের মাধ্যমিক পাস বা তার চেয়ে উচ্চতর ডিগ্রি রয়েছে। আবার একই পরিমাণ মানুষ লিখতে ও পড়তে পারেন না।

জরিপে বলা হয়, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে মুঠোফোন ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে ৮৪ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষের। তবে তাঁদের মধ্যে ৫১ দশমিক ৭ শতাংশের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ উপার্জনের জন্য ব্যবহার করেন।

জরিপে বলা হয়, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরকারি সেবা গ্রহণে কাজে লাগান। তাঁরা মূলত সরকারি প্রশিক্ষণ, সরকারি ভর্তুকি, স্বাস্থ্য ও কৃষির তথ্য নিয়ে থাকেন।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যেও ইন্টারনেট ব্যবহারে নারী পিছিয়ে। যেসব নারীর ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে, তাঁরা ছোট শহরের ব্যবসায়ী এবং অধিকাংশই পরিবারের কর্তা। চা–বাগানের নারী শ্রমিকদের মাত্র ৩৩ শতাংশ আর জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার নারীদের ৩৯ শতাংশের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ আছে।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ১৯ শতাংশ কোনো না কোনোভাবে মুঠোফোনের মাধ্যমে আর্থিক সেবা গ্রহণ করে থাকেন। এ ক্ষেত্রেও পিছিয়ে নারীরা। তবে হিজড়া জনগোষ্ঠীর সদস্যদের ৫৪ শতাংশ মুঠোফোনে আর্থিক সেবা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

জরিপে আরও উঠে আসে, পর্যাপ্ত সচেতনতার অভাবে এই জনগোষ্ঠীর পরিবারগুলোতে ডিজিটাল পরিষেবার ব্যবহার সীমিত। জরিপে ৩৮ শতাংশ বলেছেন, ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাঁরা সময় অপচয়, আর্থিক সীমাবদ্ধতা এবং অনিরাপদ ব্যবহারের মতো বিষয়ের কারণে বাধা পান। এই বাধাগুলো আবার নারীদের ক্ষেত্রে আরও বেশি (৬০ শতাংশ)।

জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে ক্যাম্পেইনিং ফর পপুলার এডুকেশনের (সিএএমপিই) নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী লিঙ্গসমতা এবং নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে কাজ করার জন্য ভিত্তি জরিপের ফলাফলের গুরুত্বের ওপর জোর দেন।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে অনলাইন নিরাপত্তা এবং এ ব্যাপারে কোথায় সহায়তা পাওয়া যায়, সে ব্যাপারে অসচেতনতা প্রকট। উত্তরদাতাদের ১৩ শতাংশ বিভিন্ন ইস্যুতে অনলাইনে রিপোর্ট করেছেন। কিন্তু ৬০ শতাংশ অনলাইন নিরাপত্তার বিষয়ে কোথায় সাহায্য চাইতে হয়, সে ব্যাপারে জানেন না।

জরিপে বলা হয়, হিজড়া জনগোষ্ঠী অনলাইনে যৌন হয়রানির বিষয়ে সবচেয়ে বেশি রিপোর্ট করেছে। জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অ্যাকাউন্ট হ্যাকড, হুমকি, সাইবার বুলিং এবং গুজব ছড়ানোর মতো ঘটনার সবচেয়ে বেশি সম্মুখীন হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার মানুষ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা মুঠোফোনের মাধ্যমে আর্থিক চুরির শিকার হয়েছেন বেশি।

জরিপ অনুযায়ী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ৫৩ দশমিক ৫ শতাংশ বিনোদনের অংশ হিসেবে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ফেসবুক (৫৭ দশমিক ৭ শতাংশ)। এরপর আছে ইউটিউব, টিকটক, ইমো এবং হোয়াটসঅ্যাপ।

ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তিতে ইতিবাচক পরিবর্তন নিশ্চিত করার মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও নারীর ক্ষমতায়নে অনুষ্ঠানে গ্রামীণফোনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান।