খাবার আর পানির কষ্টে রাঙামাটি চিড়িয়াখানার প্রাণীরা
খাঁচায় বসে আছে নিঃসঙ্গ ভালুক। পাশের একটি খাঁচায় শ্রীহীন চারটি বানর। স্বাভাবিক প্রাণচাঞ্চল্য নেই কারও। যা খাবার পায়, তাতে বন্দী প্রাণীগুলোর কোনোমতে টিকে থাকাই দায়। প্রাণীদের দেওয়া খাবার এতটাই অল্প যে খাঁচায় উঁকি দিয়ে কোথাও উচ্ছিষ্ট কিছু দেখা গেল না। এমনিতেই অবহেলিত ছিল রাঙামাটির মিনি চিড়িয়াখানাটি। কিন্তু জুলাই আন্দোলনের সময় থেকে তার অবস্থা আরও বেহাল। প্রাণীদের খাবারের বরাদ্দও বন্ধ হয়ে গেছে। মিলছে না পর্যাপ্ত পানিও।
রাঙামাটি জেলা পরিষদের অধীন ২০০২ সালে শহরের সুখী নীলগঞ্জ এলাকায় এ মিনি চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। নাম দেওয়া হয়েছিল বোটানিক্যাল গার্ডেন ও মিনি চিড়িয়াখানা। তবে এই চিড়িয়াখানার জন্য বন্য প্রাণী বিভাগের কোনো অনুমতি ছিল না। তারপরও কিছু প্রাণী থাকায় চিড়িয়াখানাটি রাঙামাটিবাসীর বিনোদনের একটা উপলক্ষ হয়েছিল।
কিন্তু এখন অব্যবস্থাপনার কারণে দিন দিন প্রাণীর সংখ্যা কমেছে এখানে। বর্তমানে এখানকার সম্বল একটি মাত্র ভালুক, একটি হরিণ, চারটি বানর, দুটি শজারু, পাঁচটি বন মোরগ ও ছয়টি কচ্ছপ। ভালুকটির নাম জাম্বু। আগে আরও অনেক বেশি প্রাণী থাকলেও বেশ কিছু মারা গেছে। অজগরও ছিল একসময়, সেটির মৃত্যুর পর খাঁচা শূন্য পড়ে আছে। হরিণের সংখ্যা ছিল তিনটি, কিন্তু এখন আছে একটি। টিকে থাকা অবশিষ্ট প্রাণীগুলোর না খেয়ে মরার দশা হয়েছে এখন।
গত শুক্রবার সকালে চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখা যায়, ভেঙে গেছে প্রাণীরদের খাঁচাগুলো। স্থানে স্থানে পাকা স্থাপনায় ফাটল দেখা গেছে। খাঁচার গ্রিলে মরিচা ধরেছে। এর মধ্যে জুলাই থেকে তাদের খাবারের বরাদ্দ বন্ধ হয়ে যায়।
চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব থাকা জীবিত চাকমার সঙ্গে এ সময় কথা হয়। তিনি বলেন, ‘জুলাই মাস থেকে আমরা কোনো খাবারের বরাদ্দ পাইনি। এখন কোনোভাবে চালিয়ে নিচ্ছি। বকেয়া একটা দোকান রয়েছে। সেখান থেকে খাবার এনে কোনোরকমে চালানো হচ্ছে। নতুন চেয়ারম্যান যোগ দিয়েছেন এখন। হয়তো এখন সবকিছু স্বাভাবিক হবে।’
অব্যবস্থাপনার কারণে দর্শনার্থীর উপস্থিতি কম। আগে গড়ে যেখানে ২০০ দর্শনার্থী হতো, এখন তা একেবারে নগণ্য। দায়িত্বরত লোকেরা বলছেন, প্রাণী না থাকায় লোকজনের কোনো আগ্রহ নেই চিড়িয়াখানাটি নিয়ে। এর মধ্যে গত জুলাইয়ে চিড়িয়াখানার প্রাণীদের জন্য পানি তোলার পাম্পটিও চুরি হয়ে গেছে। পাহাড়ের ওপর অবস্থিত চিড়িয়াখানাটির প্রাণীদের জন্য এখন টেনে টেনে পানি আনতে হয়। কিন্তু পানি আনার লোকও নেই। ফলে পর্যাপ্ত পানি প্রতিদিন সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়ে। সব মিলিয়ে খারাপ অবস্থা চিড়িয়াখানার।
প্রাণীদের বর্তমানে খাবার বলতে ভাত, দুধ, ডিম আর সবজি। তা বাকিতে একটি দোকান থেকে নিয়ে আসা হয়। আগে প্রতি মাসে বরাদ্দ দেওয়া হতো। মাসে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার খাবার বাবদ বরাদ্দ ছিল।
জানতে চাইলে জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মনতোষ চাকমা বলেন, ‘দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং চেয়ারম্যান না থাকায় খাবারের বরাদ্দ দেওয়া যায়নি। এখন নতুন চেয়ারম্যান এসেছেন। ঠিক হয়ে যাবে আশা করি। তবে আগেই সিদ্ধান্ত ছিল এই চিড়িয়াখানা বন্ধ করে দিয়ে প্রাণীগুলো বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করার। এখন কী হয় দেখি।’
চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা যায়, এই মিনি চিড়িয়াখানা দেখাশোনা, প্রাণীদের খাদ্য ও পরিচর্যা করার জন্য দুজন কর্মী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন নৈশপ্রহরী। অন্য একজন প্রাণীদের খাবার দেওয়া ও চিড়িয়াখানা পরিচর্যার কাজ করেন। তাঁরা কেউ স্থায়ী নন। তাঁরা পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে প্রেষণে এসেছেন।
প্রাণীদের প্রয়োজনের অর্ধেক খাবারও সরবরাহ করা হয় না বলে জানান নাম প্রকাশ না করা এক কর্মচারী। এখানে যাঁরা কাজ করছেন তাঁদের প্রাণী প্রতিপালনের অভিজ্ঞতা নেই। তারপরও তাঁরা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভালুকের খাবার লতাপাতা হলেও একে দেওয়া হয় ভাত। একইভাবে কোনো প্রাণী চাহিদামতো খাবার পায় না।