পাকা সেতু পাশে রেখে জীর্ণ কাঠের সাঁকোয় পারাপার

সংযোগ সড়ক না থাকায় ব্যবহার হচ্ছে না পাকা সেতু। এর পাশেই সাঁকো বসিয়ে পারাপার করছেন এলাকাবাসী। গতকাল বিকেলে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার চড়াপাড়া-বারবাকিয়া বাজার সড়কেপ্রথম আলো

অন্তত ১০ মাস আগে শেষ হয়েছে সেতুর কাজ। তবে সেতুতে উঠতে এখনো নির্মিত হয়নি সংযোগ সড়ক। এ কারণে সেতুর পাশের ভাঙাচোরা কাঠের একটি সাঁকো দিয়ে পার হচ্ছেন মানুষ। দুর্ভোগ পোহাচ্ছে পাশের তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্তত দেড় হাজার শিক্ষার্থী। দুই বছর ধরে এই সড়ক দিয়ে কোনো ধরনের গাড়ি চলাচল না করায় আশপাশের বাজারগুলোতেও মন্দা চলছে।

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার চড়াপাড়া-বারবাকিয়া বাজার সড়কে সেতুটির অবস্থান। এই সেতুটি স্থানীয়ভাবে ‘পেন্ডির ব্রিজ’ নামে পরিচিত।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) পেকুয়া কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে এক কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। সেতুটি নির্মাণে কার্যাদেশ পায় চট্টগ্রামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিপা এন্টারপ্রাইজ। ইতিমধ্যে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, পেকুয়া উপজেলার শিলখালী ও পেকুয়া সদর ইউনিয়নকে ভাগ করেছে ভোলা খাল। এটি শিলখালী খাল নামেও পরিচিত। এই খালের পেন্ডির পাড়া এলাকায় চড়াপাড়া-বারবাকিয়া বাজার সড়কে নতুন নির্মিত সেতুটির অবস্থান। তবে দুই পাশে সংযোগ সড়ক না থাকায় এটি ব্যবহৃত হচ্ছে না। সেতুটির পাশেই চার ফুট প্রস্থের একটি কাঠের সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে। সেটিও খুবই নড়বড়ে হয়ে গেছে। এই নড়বড়ে সাঁকো দিয়ে দৈনিক তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেড় হাজার শিক্ষার্থী যাতায়াত করছে।

স্থানীয় লোকজন বলেন, চড়াপাড়া-বারবাকিয়া বাজার সড়কে শিলখালী উচ্চবিদ্যালয়, ওয়ারেচিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শিলখালী আইডিয়াল স্কুলের অবস্থান। এ ছাড়া শিলখালী স্কুল স্টেশন, কাছারীমোড়া স্টেশনের শত শত ব্যবসায়ীর মালামাল পরিবহন হয় এই সড়ক দিয়ে। সেতুটির অভাবে শিক্ষার্থীরা যেমন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে তেমনি ব্যবসায়ী ও স্থানীয় মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে। নড়বড়ে কাঠের সেতুই এখন চলাচলের একমাত্র ভরসা। এতে পারাপারে ঘটছে দুর্ঘটনা। পা পিছলে খালে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। শিলখালী, বারবাকিয়া ও টৈটং ইউনিয়নের বেশির ভাগ মানুষ গাড়িযোগে এই সড়ক দিয়ে গন্তব্যে যেতেন। গাড়ি চলাচল না করায় তাঁরাও পড়েছেন বিপাকে।

শিলখালী ইউনিয়নের হেদায়েতাবাদ এলাকার আশফাকুল হক একটি বেসরকারি ব্যাংকের চকরিয়া শাখার কর্মকর্তা। সেতুর কারণে গাড়ির চলাচল না থাকায় তাঁকে প্রতিদিন দেড় কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে চড়াপাড়া বা সাঁকোরপাড় স্টেশন থেকে চকরিয়ার গাড়ি ধরতে হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রশাসন কতটুকু অদূরদর্শী হলে একটি সেতু নির্মিত হওয়ার পরেও এভাবে পড়ে থাকে। হাজারো মানুষ ও শিক্ষার্থী এ কারণে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

পেকুয়া সদর ইউনিয়নের চৈরভাঙা এলাকার নুর মোহাম্মদ শিলখালী উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সে বলে, ‘প্রতিদিন সাইকেল নিয়ে বিদ্যালয়ে যেতাম। সেতুর নির্মাণকাজ চলায় ও কাঠের সাঁকো দিয়ে সাইকেল পারাপারের সুযোগ না থাকায় গত দেড় বছর ধরে গাড়িতে করে যেতে হচ্ছে। দরিদ্র বাবার পক্ষে প্রতিদিনের গাড়িভাড়া বহন করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।’

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের পেকুয়া উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. শাহজালাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুর প্রাক্কলনে রক্ষাদেয়াল ও সংযোগ সড়কের ব্যয় ধরা হয়নি। সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে বিষয়টি সামনে আসে। তখন উপজেলা প্রকৌশলীসহ সরেজমিনে পরিদর্শন করে ঢাকায় নতুন করে প্রাক্কলন পাঠানো হয়। এ জন্য মূলত সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলেও সংযোগ সড়ক ও রক্ষাদেয়াল হয়নি। নতুন বরাদ্দ এলেই কাজ শুরু করা হবে।’