মানি লন্ডারিং মামলায় তারেক-মামুনের সাজার রায় স্থগিত, আপিলের অনুমতি

হাইকোর্ট ভবনফাইল ছবি

মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন আল মামুনকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দিয়ে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন, তার কার্যক্রম স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) মঞ্জুর করে এই আদেশ দেওয়া হয়। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।

ওই মামলায় ২০১৬ সালের ২১ জুলাই হাইকোর্ট রায় দেন। এই রায়ে বিচারিক আদালতের খালাসের রায় বাতিল করে তারেক রহমানকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট; সেই সঙ্গে তাঁকে ২০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। বিচারিক আদালতের রায়ে গিয়াসউদ্দিন আল মামুনকে দেওয়া ৭ বছরের কারাদণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট। তবে বিচারিক আদালতে মামুনকে দেওয়া ৪০ কোটি টাকার জরিমানা কমিয়ে ২০ কোটি টাকা করা হয়।

হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে বিলম্ব মার্জনা চেয়ে চলতি বছর লিভ টু আপিল করেন গিয়াসউদ্দিন আল মামুন। শুনানি নিয়ে এই লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ; পাশাপাশি ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে লিভ টু আপিলের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন ও আইনজীবী কায়সার কামাল শুনানি করেন। দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান।

পরে আইনজীবী কায়সার কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারেক রহমান বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য ৭ বছরের সাজা দেওয়া হয় রাজনৈতিক প্রতিহিংসায়। আপিল বিভাগ লিভ দিয়েছেন (আপিল করার অনুমতি)। দুদক ও আমাদের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আপিলের সারসংক্ষেপ দিতে বলেছেন। উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ৭ বছরের দণ্ড স্থগিত করেছেন। এই মামলায় দুজন আসামি, দুজনের ক্ষেত্রে সাজা স্থগিত করা হয়েছে।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান
ফাইল ছবি

২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর তারেক ও মামুনকে আসামি করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলাটি করে দুদক। মামলায় অভিযোগ করা হয়, টঙ্গীতে প্রস্তাবিত ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ নির্মাণ কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন মামুন। ২০০৩ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে ওই টাকা বিভিন্ন পদ্ধতিতে সিঙ্গাপুরের সিটি ব্যাংকে মামুনের ব্যাংক হিসাবে পাচার করা হয়। ওই টাকার মধ্যে ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা তুলে খরচ করেন তারেক রহমান।

২০১১ সালের ৬ জুলাই এই মামলার বিচার শুরু হয়। রায় হয় ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর। রায়ে তারেক রহমানকে খালাস এবং গিয়াসউদ্দিন আল মামুনকে ৭ বছর কারাদণ্ড এবং ৪০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।

এরপর ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের খালাসের বিরুদ্ধে আপিলের আবেদন করে দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি হাইকোর্ট দুদকের আপিল গ্রহণ করেন। এর ধারাবাহিকতায় দুদকের করা আপিলের সঙ্গে কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে মামুনের করা আপিলের ওপর হাইকোর্টে একসঙ্গে শুনানি  হয়। ২০১৬ সালের ২১ জুলাই হাইকোর্ট রায় দেন, যা আজ স্থগিত হলো।