প্রাথমিক তদন্তে সম্পৃক্ততা পাওয়া না গেলে মামলা থেকে নাম বাদ দিতে হবে

পুলিশ সদর দপ্তরফাইল ছবি

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হতাক্যাণ্ডসহ অন্যান্য ঘটনা ঘিরে যেসব মামলা হচ্ছে, সেগুলোর প্রাথমিক তদন্তে কোনো আসামির সম্পৃক্ততা পাওয়া না গেলে মামলা থেকে তাঁর নাম প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করতে বলেছে পুলিশ সদর দপ্তর। একই সঙ্গে সঠিক তথ্যপ্রমাণ ছাড়া এসব মামলায় কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা যাবে না বলেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি-কনফিডেনশিয়াল) মো. কামরুল আহসান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেলে যোগাযোগ করা হলে কামরুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ১০ সেপ্টেম্বর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ চিঠি পুলিশের সব ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের ওই চিঠিতে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির প্রথম সভার কার্যবিবরণীর বরাত দিয়ে আরও বলা হয়, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান ঘিরে হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য মামলায় তদন্ত ছাড়া কোনো সরকারি কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া না গেলে তাঁদের নামও প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া সঠিক তথ্যপ্রমাণ ছাড়া এসব মামলায় কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা যাবে না।

এসব বিষয়ে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা উল্লেখ করে প্রতিবেদন ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠাতে হবে।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও দলটির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে সারা দেশের বিভিন্ন থানা ও আদালতে বহু মামলা হয়েছে। এসব মামলায় নাম উল্লেখ করে আসামি করা ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবেও অসংখ্য আসামি করা হয়েছে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে গুলি চালাতে নির্দেশ দিয়ে হত্যা ও নির্যাতন চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে এসব মামলায়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামেই ১৬৫টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে, যার মধ্যে ১৪৭টিতে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। বাকি ১৮টি মামলা হয়েছে হত্যাচেষ্টা ও অপহরণের অভিযোগে।

গণ–আসামি করে করা এসব মামলার বিচারের ভবিষ্যৎ কী, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, জুলাই-আগস্টের গণ–আন্দোলনে হতাহতের বিচার চেয়ে দেশজুড়ে যেসব মামলা হচ্ছে, সেগুলোর ধরন যেন আওয়ামী লীগ আমলের ‘গায়েবি’ মামলার মতোই। এতে করে ভুক্তভোগীর পরিবার সঠিক বিচার পাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে।

যাচাই-বাছাই না করে মিথ্যা বা ভুয়া মামলা দিয়ে নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি না করার অনুরোধ এসেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকেও।

এমনই একজন ভুক্তভোগী মিরপুরের ব্যবসায়ী আফরোজ উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৫ সালে চাঁদার জন্য শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদত ও তাঁর সহযোগীদের হাতে তাঁর ভাই খুন হন। মামলা প্রত্যাহার করানোর জন্য সন্ত্রাসীরা একের পর এক তাঁকে হয়রানি করে আসছেন। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের ঘটনায়ও একটি হত্যা মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। মামলার বাদীর সঙ্গে দেখা করলে তাঁকে বলা হয়, সন্ত্রাসীরা জোর করে আসামির তালিকায় তাঁদের চাওয়া অনুযায়ী ব্যক্তির নাম ঢুকিয়ে জোর করে তাঁর কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়েছেন।