তুরস্কে ভূমিকম্প
উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশিদের জন্য ভাত, মুরগির মাংস, আলুভর্তা ও ডাল রান্না করেছে দূতাবাস
তুরস্কে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত গাজিয়ানতেপ শহর থেকে বাংলাদেশিদের রাজধানী আঙ্কারায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আঙ্কারায় বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে গাড়ি পাঠিয়ে তাঁদের সেখানে নেওয়া হয়। আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে তাঁরা রাজধানীতে আগে থেকে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের সঙ্গে থাকছেন।
বাংলাদেশ দূতাবাসের শার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স মো. রফিকুল ইসলাম আজ প্রথম আলোকে বলেন, মোট ২১ জন বাংলাদেশিকে গাজিয়ানতেপ থেকে আঙ্কারায় আনা হয়েছে। তাঁরা অন্য বাংলাদেশি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকবেন। তাঁদের জন্য দূতাবাসে ভাত, মুরগির মাংস, আলুভর্তা আর ডাল দিয়ে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাঁদের প্রায় সবাই গত কয়েক দিন ভাত খেতে পারেননি।
মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সীমান্ত শহর কাহরামানমারাসে গোলাম সাঈদ নামের একজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁকে সাধারণ কোনো গাড়িতে করে আঙ্কারায় আনা যাচ্ছে না। দূতাবাসের একটি দল সেখানে পাঠানো হয়েছে। সেখানে গোলাম সাঈদসহ আরও দুজন আছেন। তবে সড়কে ফাটলসহ বিভিন্ন কারণে যাতায়াতে দীর্ঘ সময় লাগছে। গাজিয়ানতেপ থেকে বাংলাদেশিদের আনতেও দীর্ঘ সময় লেগেছে।
সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে তুরস্ক ও সিরিয়া সীমান্তবর্তী অঞ্চলে আঘাত হানে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প। এতে তুরস্কের আদানা, গাজিয়ানতেপ, মালাতিয়া, হাতায়াসহ বেশ কয়েকটি শহরে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় ১৭ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধারে কাজ চলছে। তবে এতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তীব্র ঠান্ডা, তুষারপাত ও বৃষ্টি।
বাংলাদেশ দূতাবাসের খাবারের আয়োজনসহ অন্যান্য উদ্যোগকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশিরা। তবে গাজিয়ানতেপ থেকে আঙ্কারায় আসার পথে ভূমিকম্পের তাণ্ডবলীলা দেখে তাঁরা আতঙ্কিত। ১৪ মাস বয়সী সন্তানের মা জামিলা ইয়াসমিন হোয়াটসঅ্যাপে আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দূতাবাসের আয়োজন খুব ভালো ছিল। আমরা এখন খুব ক্লান্ত। গাজিয়ানতেপ থেকে গতকাল বুধবার বিকেলে রওনা দিয়ে আজ ভোরে দূতাবাসে পৌঁছেছি। আসার পথে দেখেছি ভূমিকম্পের তাণ্ডবের চিহ্ন। বাড়িঘর ধসে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। আমরা কথা বলার মতো অবস্থায় নেই।’
দূতাবাসের পাশাপাশি তুরস্কের বাংলাদেশ শিক্ষা ও সংস্কৃতি অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান এই বাংলাদেশিরা। অ্যাসোসিয়েশনটি তুরস্কে নিবন্ধিত একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান (এনজিও)। তুরস্কে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও নাগরিকদের মধ্যে শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশে কাজ করছে তারা। অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যসংখ্যা দুই শতাধিক। এই সদস্যরাই ঠিক করেছেন গাজিয়ানতেপ থেকে আসা বাংলাদেশিরা কে কার সঙ্গে থাকবেন।
এই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থী হাফিজ মুহাম্মদের বাসায় উঠেছেন গাজিয়ানতেপ থেকে আসা শিক্ষার্থী ইশরাত ফাতেমা। হাফিজ মুহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ইশরাত ফাতেমা তিন দিন একটুও ঘুমাতে পারেননি। তিনি খুব ক্লান্ত।
গাজিয়ানতেপ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. সাইয়েদুল হাসানও আজ ভোরে আঙ্কারায় পৌঁছেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আঙ্কারায় দূতাবাসে আমরা ভোর সাড়ে চারটার দিকে পৌঁছাই। আমাদের জন্য দূতাবাসের পক্ষ থেকে খাবার রান্না করে রাখা হয়েছিল। আমরা এখন অন্য বাংলাদেশিদের সঙ্গে তাঁদের বাসায় আছি। ভূমিকম্পে আঙ্কারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এখানে এসে আমরা অনেকটাই নিরাপদবোধ করছি। তবে আবার অনিশ্চয়তা শুরু হলো। এখানে কত দিন থাকতে হবে, তা কেউ জানি না।’
সাইয়েদুল হাসান জানালেন, তাঁরা গাজিয়ানতেপের যে মসজিদে আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেখানে থাকা একজন বাংলাদেশি আঙ্কারায় আসেননি। তিনি সেখানকার আরেকটি আশ্রয়কেন্দ্রে থেকে গেছেন।
আঙ্কারায় বাংলাদেশ দূতাবাসের দেওয়া তথ্য বলছে, তুরস্কে বর্তমানে পাঁচ থেকে সাত হাজার বাংলাদেশি বসবাস করছেন। ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত কেউ মারা গেছেন বলে তথ্য পাওয়া যায়নি।
শোক পালন ও জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের নম্বর: ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় মানুষের মৃত্যুতে এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার। আজ শোক পালন করা হচ্ছে। দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি-বেসরকারি ভবন, বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হচ্ছে। ভূমিকম্পে মৃত ব্যক্তিদের জন্য দেশের সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রার্থনার আয়োজন করা হচ্ছে।
তুরস্কের ইস্তাম্বুলে কনস্যুলেট জেনারেল অব বাংলাদেশ ভবনের সামনেও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। কনস্যুলেট জেনারেল অব বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ব্যাপক হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করছে। তুরস্কে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের জরুরি প্রয়োজনে কনস্যুলেটের হটলাইন নম্বরে (+ ৯০৮০০২৬১০০২৬) যোগাযোগ করতে পারবেন।
আঙ্কারায় বাংলাদেশ দূতাবাসের ওয়েবসাইটেও ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বসবাসকারী বাংলাদেশিদের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। ওয়েবসাইটে দূতাবাসের শার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স মো. রফিকুল ইসলাম (+৯০৫৪৬৯০৫০৬৪৭) ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. আবুল বাশারের (+৯০৫৩৮৯১০৯৬৩৫) সঙ্গে যোগাযোগ করতেও বলা হয়েছে।