সীতাকুণ্ডে গ্রেপ্তার আতঙ্কে বাড়িতে থাকছেন না বিএনপির নেতা-কর্মীরা
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নাশকতাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার অভিযোগে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে গত দুই সপ্তাহে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের অঙ্গসংগঠনের ৬২ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার ৬২ জনের মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের উপজেলা পর্যায়ের কোনো নেতা নেই। উপজেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা গা ঢাকা দিয়েছেন। ফলে তাঁদের গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
গ্রেপ্তার ৬২ জনের মধ্যে মহাসড়কে নাশকতার ঘটনায় করা মামলার আসামি সাতজন। অন্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ তথ্য সীতাকুণ্ড থানা-পুলিশের। সর্বশেষ গতকাল রোববার রাতে উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়ন থেকে মো. মহিউদ্দিন ও মো. সাদ্দাম নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, মহিউদ্দিন সলিমপুর ইউনিয়ন শিবিরের সদস্য এবং সাদ্দাম ওই ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি। ২০ জুলাই করা মামলার তদন্তে তাঁদের নাম এসেছে। আজ সোমবার তাঁদের কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
নাশকতা মামলার অন্যতম যুবদল নেতা ফজলুল করিম চৌধুরী বলেন, পুলিশ এখন বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল আর স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে প্রতি রাতে অভিযান চালাচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের ভয় দেখিয়ে নেতা-কর্মীদের অবস্থান জানতে চাইছে। গতকাল রোববার রাতে কুমিরায় তাঁর বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালায়। অথচ তিনি দীর্ঘদিন এলাকায় থাকেন না। পুলিশ সহিংসতার ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই জড়িতদের চিহ্নিত করতে পারত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে পুলিশের ধরপাকড় শুরু হওয়ার পর গ্রেপ্তার আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছেন সীতাকুণ্ডের বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা। বিএনপির নেতারা বলছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। এ আন্দোলনে তাঁদের সম্পৃক্ততা ছিল না। এ সময়ে তাঁদের কোনো দলীয় কর্মসূচিও ছিল না। তবু পুলিশ বিএনপির সদস্যসচিব কাজী মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, যুবদলের আহ্বায়ক ফজলুল করিম চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক দলের চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি মো. মোরসালিনকে আসামি করে মামলা করেছে।
গ্রেপ্তার আতঙ্কে এলাকা ছাড়ার বিষয়টি একাধিক বিএনপি নেতার সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অনেক নেতার মুঠোফোন বন্ধ রয়েছে। খুদে বার্তা পাঠিয়েও তথ্য পাওয়া যায়নি। মামলার আসামির তালিকায় থাকা উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব কাজী মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। তাঁর ভাই চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মো. সালাউদ্দিনের মুঠোফোনেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে তাঁদের আরেক ভাই কাজী মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তারের ভয়ে তাঁর ভাইয়েরা দীর্ঘদিন বাড়িতে আসেন না। কোথায় আছেন, তা–ও তিনি জানেন না। তাঁদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ নেই বলেও জানান।
সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, মহাসড়কে নাশকতাকারী কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। শুধু মহাসড়কে নাশকতাকারী নয়, ১৬ থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত বিএনপি–জামায়াতের যেসব নেতা-কর্মীর ফোন লোকেশন দেখা হচ্ছে, তাঁদের লোকেশন ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সহিংসতা–কবলিত স্থানে পাওয়া গেলেই গ্রেপ্তার করা হবে।