বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ সাবেক উপাচার্য কলিম উল্লাহর, প্রতিবেদকের বক্তব্য
‘কাজ অর্ধেক, ব্যয় ৫৫ কোটি টাকা, এখন প্রকল্পই বাতিল’ শিরোনামে ১৬ অক্টোবর প্রথম আলোর তৃতীয় পৃষ্ঠায় ও পরদিন অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন রংপুরে অবস্থিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ।
প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পটি অনুমোদন পায় ২০১৫ সালে। তখন এ প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন উপাচার্য এ কে এম নূর-উন নবী। তিনি (কলিম উল্লাহ) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ২০১৭ সালে। উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি দেখেন যে অনুমোদিত প্রকল্পের নকশা থেকে কাজের নকশা পুরোপুরি ভিন্ন। মোট ফ্লোর এরিয়া ডিপিপিতে বর্ণিত এরিয়ার চেয়ে ৩ হাজার ১৫০ বর্গমিটার বেশি। নকশা পরিবর্তন করে তিনটি স্থাপনার কার্যাদেশ দেন এ কে এম নূর-উন নবী। এই ব্যত্যয় প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) এবং প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) অনুমোদন ছাড়া বাস্তবায়ন হয়েছে।
প্রতিবাদপত্রে কলিম উল্লাহ দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পের অনিয়ম তদন্তে গঠিত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত প্রতিবেদন অসত্য ও বিভ্রান্তিকর, যা ২০২১ সালে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। তাঁর অভিযোগ, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির প্ররোচনায় তাঁকে অভিযুক্ত করে ইউজিসি এই ফরমায়েশি প্রতিবেদন করেছে। নকশা পরিবর্তনের অনিয়মের সঙ্গে তিনি জড়িত নন।
প্রতিবেদকের বক্তব্য
সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউজিসি। সেই সংস্থা থেকে গঠিত তিন সদস্যের কমিটির প্রতিবেদনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পের অনিয়মে নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহকে দায়ী করা হয়। ইউজিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, কলিম উল্লাহ উপাচার্যের দায়িত্ব পাওয়ার পর নতুন পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে শেখ হাসিনা ছাত্রী হল ও ওয়াজেদ মিয়া গবেষণা ইনস্টিটিউটের আগের নকশা বদলে ফেলেন। ১৪ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন কেন অসত্য, কোথায় বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া হয়েছে, প্রতিবাদপত্রে তা সুনির্দিষ্ট করে বলেননি কলিম উল্লাহ।
ইউজিসির প্রতিবেদনকে আমলে নিতে বলেছিলেন তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানও। ২০২২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিকে পাঠানো এক আধা সরকারিপত্রে (ডিও লেটার) মান্নান বলেছিলেন, এ প্রকল্পে অনিয়মে যুক্ত দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ইউজিসির মতামতকে বিবেচনায় নিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা নিরসনে দীপু মনির হস্তক্ষেপ কামনা করেন এম এ মান্নান।
ইউজিসির প্রতিবেদনের পাশাপাশি গত বছরের ১৭ আগস্ট আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট সম্মেলনকক্ষে এ প্রকল্পের বিশেষ সভায়ও নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর দ্বিতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়ে নকশা পরিবর্তনের বিষয়ে আলোচনা হয়। নকশা পরিবর্তনের ফলে ভবনের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়াসহ ভবনের নির্মাণকাজে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হয় বলে কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়। ইউজিসির প্রতিবেদন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সভা,পরিকল্পনামন্ত্রীর আধা সরকারিপত্র ও আইএমইডির সুপারিশের তথ্য–উপাত্ত নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রথম আলো।