পাঁচ উপদেষ্টার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করলেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর পুরোনো সাত উপদেষ্টার মধ্যে পাঁচ উপদেষ্টার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তিনি এই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
পদত্যাগ করা পাঁচজন হলেন জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ এবং সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এবং শিক্ষা, সামাজিক উন্নয়ন ও রাজনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা আলাউদ্দিন আহমেদ।
গত সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রী এই পাঁচজনের মধ্যে চারজনকে গণভবনে ডেকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান। তাঁরা রাতেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। গতকাল মসিউর রহমান পদত্যাগ করেন।
পুরোনোদের মধ্যে আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী ও প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক বহাল আছেন। নতুন যোগ দেওয়া চার উপদেষ্টাসহ এখন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার সংখ্যা ছয়। নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের পর নতুন নিয়োগ পাওয়া উপদেষ্টারা হলেন সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ। এই চারজনকে এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে গিয়ে পুরোনো ৩০ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকেও বাদ দিয়েছেন। সর্বশেষ পাঁচ উপদেষ্টাকেও অব্যাহতি দিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়, গওহর রিজভী ও তারিক আহমেদ সিদ্দিক নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কাজে সম্পৃক্ত নন বলে তাঁদের স্বপদে বহাল রাখা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা নিয়োগের ঘটনা নতুন না হলেও এবার শুরু থেকেই এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ছিল। উপদেষ্টাদের মন্ত্রণালয়ভিত্তিক দায়িত্ব দেওয়া হয়। এতে কয়েকজন উপদেষ্টার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর কাজ নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। উপদেষ্টারা রাষ্ট্রপতির কাছে রাষ্ট্রের গোপনীয়তা রক্ষার শপথ না নিলেও তাঁরা মন্ত্রিসভার বৈঠকে যোগ দেন। এ নিয়ে জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের প্রয়াত এক প্রবীণ নেতা কঠোর সমালোচনাও করেন।
জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামকে নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরেই নানা কথাবার্তা আছে। পদ্মা সেতু নিয়ে অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান বিতর্কের মধ্যে পড়েন। তাঁকে এক মাসের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল।
সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের হল-মার্ক কেলেঙ্কারির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়োগসহ নানা কাজে হস্তক্ষেপের অভিযোগও ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। শিক্ষা উপদেষ্টা আলাউদ্দিন আহমেদ দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ। সরকারি বা দলীয় কোনো কাজে তিনি তেমনভাবে সম্পৃক্ত নন।
তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ছিলেন বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের মূল ব্যক্তি। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ওই মন্ত্রণালয়ে তেমন কোনো ভূমিকাই রাখতে পারেননি বলে প্রচার আছে।
আইনি নোটিশ: মন্ত্রীর পদমর্যাদায় থাকা প্রধানমন্ত্রীর ১১ উপদেষ্টার নিয়োগ ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা বাতিল চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ ১১ উপদেষ্টার বরাবরে গতকাল রেজিস্ট্রি ডাকযোগে ও কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ওই নোটিশ পাঠানো হয়।
গতকাল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন এ তথ্য জানান। আইনজীবী রাগীব রউফ চৌধুরীর পক্ষে ওই নোটিশ পাঠানো হয় বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, ১১ উপদেষ্টার পাঁচজন ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন।
নোটিশ পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে ১১ জন উপদেষ্টার নিয়োগ ও তাঁদের আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা বাতিল করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় রিট দায়েরসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আরও বলা হয়, সংবিধানের ৫৮(৫) অনুচ্ছেদে মন্ত্রী বলতে প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী অন্তর্ভুক্ত। উপদেষ্টারা মন্ত্রী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন না।