দীঘিপাড়া খনি থেকে কয়লা তোলার উদ্যোগ

সরকার দেশের আরেকটি খনি থেকে কয়লা তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। নতুন এই খনির অবস্থান দিনাজপুর জেলার দীঘিপাড়ায়। এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত দেশের পাঁচটি কয়লাখনির মধ্যে মজুতের হিসাবে এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম। এই খনি উন্নয়নের লক্ষ্য হচ্ছে প্রতিবছর দেশের কয়লা উত্তোলন ৪০ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করা।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, সরকার বিদ্যুৎ উত্পাদন বাড়ানোর যে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে, তাতে দেশের এবং আমদানি করা প্রচুর কয়লা প্রয়োজন হবে। সে জন্যই আরেকটি খনি থেকে কয়লা তোলার এই উদ্যোগ। নতুন খনিটি থেকে কয়লা তোলার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কোম্পানিকে (বিসিএমসিএল)।
জানতে চাইলে বিসিএমসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমিনুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ইতিমধ্যে তাঁরা ব্যুরো অব মিনারেল ডেভেলপমেন্টের (বিএমডি) লাইসেন্স পেয়েছেন। আগামী জুলাইতে তাঁরা সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ জন্য খসড়া প্রকল্প প্রস্তাবও (ডিপিপি) অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রথমে পেট্রোবাংলা ও পরে জ্বালানি মন্ত্রণালয় এই ডিপিপি অনুমোদন করবে।
অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিসিএমসিএল অবশ্য শুধু সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজেই নিজেদের সীমিত রাখতে চায় না। তারা দীঘিপাড়া থেকে কয়লা তোলারও দায়িত্ব নিতে চায়। সেই প্রস্তাব তারা ইতিপূর্বে সরকারের কাছে দিয়ে রেখেছে। অপর দিকে, দীঘিপাড়া খনি থেকে কয়লা তোলার জন্য চীনের একাধিক প্রতিষ্ঠানও সরকারের কাছে তাদের আগ্রহের কথা জানাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, সরকার এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেনি। বিসিএমসিএলের প্রস্তাব সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় আছে।
দীঘিপাড়া কয়লাখনিটি আবিষ্কার করে বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি), ১৯৯৫ সালে। জরিপের তথ্য অনুযায়ী এই ক্ষেত্রটি ২৪ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। ক্ষেত্রটিতে ভূগর্ভের ৩২৮ থেকে ৪৫৫ মিটার গভীরে তিনটি স্তরে প্রায় ৮৬ কোটি ৫০ লাখ মেট্রিক টন উন্নত মানের বিটুমিনাস কয়লার মজুত রয়েছে। সরকার দীঘিপাড়া খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর জিএসবি ক্ষেত্রটি বিসিএমসিএলের কাছে হস্তান্তর করেছে। এখন সেখানে জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
বর্তমানে দেশের একমাত্র কয়লাখনি বড়পুকুরিয়া থেকে বছরে ১০ লাখ টন কয়লা তোলার লক্ষ্য নির্ধারিত আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বছরই আট লাখ টনের বেশি কয়লা তোলা সম্ভব হয়নি। ওই কয়লা দিয়ে বড়পুকুরিয়ায় ২৫০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো হচ্ছে। সেখানে আরও ১৫০ মেগাওয়াটের একটি নতুন ইউনিট স্থাপন প্রক্রিয়াধীন আছে।
এ ছাড়াও সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে ৩৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উত্পাদন। এর মধ্যে ২০ হাজার মেগাওয়াট হবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ। এই ২০ হাজারের মধ্যে আবার ১১ হাজার মেগাওয়াট করা হবে দেশের কয়লা থেকে। কাজেই দেশের খনিগুলো থেকে কয়লা উত্তোলন বাড়াতেই হবে। সেই লক্ষ্যেই সরকার নতুন কয়লাখনি উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে।
এখন পর্যন্ত দেশে আবিষ্কৃত কয়লাক্ষেত্রগুলো হচ্ছে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া, ফুলবাড়ী ও দীঘিপাড়া; রংপুরের খালাসপীর ও বগুড়া-জয়পুরহাটের জামালগঞ্জ কয়লাক্ষেত্র। এই ক্ষেত্রগুলোতে কয়লার মোট মজুত প্রায় ৩০০ কোটি মেট্রিক টন, যার জ্বালানিমান প্রায় ৭০ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাসের সমান।
দেশে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত গ্যাসের পরিমাণ ২৭ টিসিএফের মতো। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৪ টিসিএফ ব্যবহার করা হয়েছে।