ফেসবুকে না লেখার শর্তে ছাড়া পান আশরাফ মাহাদী
ফেসবুকে লিখবেন না—এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন আশরাফ মাহাদী। তিনি ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুল হক আমিনীর নাতি। গত ৬ জুলাই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়েছিলেন তিনি। ঠিক যেখান থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, অপহরণকারীরা দুদিন পর সেখানেই তাঁকে ফেলে যায়।
প্রথম আলোকে এসব কথা জানিয়েছেন আশরাফ মাহাদীর বাবা মাওলানা জসিম উদ্দিন।
আশরাফ নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় জসিম উদ্দিন লালবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। গতকাল রোববার রাতে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, তাঁর ছেলে মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। গত ২৫ জুলাই আশরাফ মিসরের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। বাংলাদেশের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ দুবাই থেকে তাঁকে ফিরিয়ে আনে। তাঁর ছেলের নামে দলেরই আরেকটি ছেলে মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় তাঁকে চট্টগ্রামের একটি আদালতে উপস্থাপন করা হয় গত ২৮ জুলাই। ওই দিনই আদালত তাঁকে জামিন দেন। ওই মামলায় আসামি ছিলেন নয়জন। তাঁদের মধ্যে শুধু আশরাফকেই গ্রেপ্তার করা হয়।
গত ১৯ জুলাই চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানায় করা মামলায় ওসমান কাসেমি বলেন, আসামিরা হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আহমদ শফীসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও জোরপূর্বক ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচারসহ জোর করে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন সময়ে তাঁরা এর প্রতিবাদ করলে আসামিরা ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে আসছিলেন। ১৮ জুলাই ফোন করে অবস্থান নিশ্চিত হয়ে ১০ থেকে ১২ জন তাঁর ওপর হামলা করেন। তাঁর কাছ থেকে টাকা ও মুঠোফোনও ছিনিয়ে নেন।
মাওলানা জসিম উদ্দিন মনে করেন, যাঁদের হস্তক্ষেপে আশরাফ মাহাদীকে দুবাই থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে, তাঁরাই তাঁর ছেলেকে অপহরণ করেছিলেন। গত ৬ জুলাই রাতে তিনি লালবাগে তাঁর নানির সঙ্গে দেখা করে রিকশায় ফিরছিলেন। রাত ১১টা ২৭ মিনিটে তিনি ফেসবুকে পোস্ট দেন তাঁকে কেউ অনুসরণ করছে। তাঁর কিছু হলে দায়ী হবেন ফয়জুল্লাহ-আলতাফ গং। তারপর তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই সময় আশরাফের অবস্থান ছিল মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে। ৮ জুলাই বেড়িবাঁধের কাছেই অপহরণকারীরা তাঁকে ফেলে রেখে যায়। একটি মুঠোফোনের দোকান থেকে তিনি যোগাযোগ করলে জসিম উদ্দিন গিয়ে তাঁকে নিয়ে আসেন। সকালে তাঁরা পুলিশের সঙ্গে দেখা করেন।
জসিম উদ্দিন আরও বলেন, দুদিনের অজ্ঞাতবাসে অপহরণকারীরা আশরাফের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করেছেন যে তিনি আর ফেসবুকে লেখালেখি করবেন না। লেখালেখির সূত্র ধরে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের একটি অংশের সঙ্গে বাহাস চলছিল আশরাফের।
এ বিষয়ে জানতে ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি। তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, কেন তাঁকে আশরাফ মাহাদী দায়ী করেছেন, তিনি বুঝতে পারছেন না।
লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) কে এম আশরাফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আশরাফ মাহাদী ফেরত এসেছেন—এটুকুই তাঁরা জেনেছেন। কেন অপহরণ করা হয়েছে জানেন না।
আশরাফের বাবা জসিম উদ্দিন বলেছেন, ‘ছেলে গিয়েছে, ফেরত এসেছে।’