সিনহাকে স্পষ্টতই হত্যা করা হয়েছে, দাবি পরিবারের
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের (৩৬) মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেছে তাঁর পরিবার। তাঁরা বলছেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়েও নিজ দেশে সিনহাকে এভাবে মারা যেতে হবে, তা তাঁরা কখনোই ভাবেননি।
সিনহার বাড়ি যশোরের বীর হেমায়েত সড়কে। তাঁর বাবা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপসচিব মুক্তিযোদ্ধা মরহুম এরশাদ খান। সিনহা ৫১ বিএমএ লং কোর্সের সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমিশন লাভ করেন। ২০১৮ সালে সৈয়দপুর সেনানিবাস থেকে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সেও (এসএসএফ) দায়িত্ব পালন করেন। সিনহা অবিবাহিত ছিলেন। দুই বোনের একমাত্র ভাই তিনি। বড় বোন একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষক। ছোট বোন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এবং আমাজনে চাকরি করেন।
সিনহার মৃত্যু নিয়ে পরিবারের ভাষ্য জানতে আজ সোমবার রাত সাড়ে আটটায় যোগাযোগ করলে তাঁর মা নাছিমা আক্তার জানান, কথা বলার মতো মানসিক অবস্থায় তিনি নেই। তাঁর বড় মেয়ে শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌসের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
শারমিন শাহরিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা স্পষ্ট একটা হত্যাকাণ্ড। আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা তো ভাইকে আর বাস্তবে পাব না। আমরা চাই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। যারা জড়িত, তাদের বিচার হোক।’
শারমিনের ভাষায় সিনহা ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী এবং অন্য রকম ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। সুযোগ পেলেই বই নিয়ে বসে পড়তেন। পরিচিতজনেরা তাঁকে সমস্যার সমাধানকারী হিসেবে চিনত। বিশ্বভ্রমণের প্রচণ্ড ইচ্ছা ছিল সিনহার। সেই চিন্তা থেকেই চাকরি থেকে অবসর নিয়েছিলেন। চাকরি ছাড়ার পর গত দেড় বছরে ভ্রমণ পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন। সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার ‘ব্যাকপ্যাকটিও’ ছিল রেডি। এ বছরই চীন যাত্রার মধ্য দিয়ে সেই ভ্রমণ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সবকিছু থেমে যায়।
শারমিন বলছিলেন, সিনহার পরিকল্পনা ছিল বিশ্ব ভ্রমণের খুঁটিনাটি তিনি নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দেবেন। করোনার কারণে যেহেতু ভ্রমণ শুরু করা গেল না, তাই বসে না থেকে কক্সবাজারকেন্দ্রিক প্রামাণ্য চিত্র বানানোর জন্য সিনহা চলে যান। পরিবারের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। সর্বশেষ ২৬ জুলাই ভাইয়ের জন্মদিনে শারমিন কক্সবাজারে কেক পাঠিয়েছিলেন। ঘটনার আগের দিনও মায়ের সঙ্গে তাঁর স্বাভাবিক কথাবার্তা হয়েছে।
শারমিন বলেন, তাঁর বাবা দেশের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন। তাঁর ভাইও দেশের জন্য কাজ করেছেন। তাঁকে এভাবে মারা যেতে হবে, তা তাঁরা কখনোই ভাবেননি। এটা মেনে নেওয়া যায় না।
৩১ জুলাই রাত ৯টায় টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। এই ঘটনায় একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে সিনহার সঙ্গে থাকা সিফাত নামে এক যুবকের ভাষ্য দিয়ে বলা হয়েছে, ‘কোনোরূপ জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই মেজর (অব.) সিনহার বুকে একে একে তিনটি গুলি ছোড়েন পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী।’ অন্যদিকে টেকনাফ মডেল থানায় পুলিশের করা মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সিনহা মো. রাশেদ হঠাৎ করে তাঁর কোমরের ডান পাশ থেকে পিস্তল বের করে গুলি করার জন্য উদ্যত হলে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ লিয়াকত আলী নিজের এবং সঙ্গে থাকা অফিসার ফোর্সদের জানমাল রক্ষার জন্য চারটি গুলি করেন।’
সিনহা রাশেদকে ঢাকায় সামরিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।