করোনা সংকটে বেতন পাচ্ছেন না পৌরকর্মীরা
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে কাজ চালিয়ে গেলেও নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না দেশের ৩২৮টি পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পৌরসভাগুলোর বেতন-ভাতার সমস্যা বেশ পুরোনো। করোনা পরিস্থিতিতে পৌরকর আদায় বন্ধ থাকায় সংকট আরও বেড়েছে। অন্যদিকে, করোনা মহামারির মধ্যে কাজ করলেও কোনো ধরনের সুরক্ষাসামগ্রী পাননি পৌরকর্মীরা। এখন পর্যন্ত দেড় শতাধিক পৌরকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠন পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএপিএস) তথ্য অনুযায়ী, করোনার সংক্রমণ শুরুর আগে দেশের ৩২৮টি পৌরসভার মধ্যে ২৮০টিতে বেতন-ভাতা বকেয়া ছিল। চার মাস ধরে আয়ের মূল উৎস পৌরকর, ট্রেড লাইসেন্স, হাট-বাজার ইজারা, ভূমি হস্তান্তর, দোকানভাড়াসহ অন্যান্য ফি আদায় হচ্ছে না। এর ফলে যেসব পৌরসভায় নিয়মিত বেতন হতো, সেগুলোতেও বেতন বকেয়া পড়ছে।
বিএপিএস বলছে, চলতি জুলাই মাস পর্যন্ত তিন শতাধিক পৌরসভায় সর্বনিম্ন ২ থেকে সর্বোচ্চ ৬৫ মাস পর্যন্ত বেতন-ভাতা বকেয়া পড়েছে। এ অবস্থায় পরিবার নিয়ে চরম সংকটে পড়েছেন এর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
করোনা পরিস্থিতির আগে কিশোরগঞ্জ পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন নিয়মিত হতো। মাঝে একবার বেতন হলেও বর্তমানে দুই মাস ধরে বেতন বন্ধ আছে। পৌরসভায় নিয়মিত ও অনিয়মিত (চুক্তিভিত্তিক) মিলিয়ে মোট ৬৪৯ জন কর্মী রয়েছেন। তাঁদের প্রতি মাসের বেতন বাবদ খরচ সাড়ে ৫২ লাখ টাকা।
কিশোরগঞ্জ পৌরসভার সার্ভেয়ার ও কর্মকর্তা-কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, পৌরসভার আয়-ব্যয়ে সামঞ্জস্য ছিল। করোনার কারণে পরিস্থিতি বদলে গেছে। পৌরকর, পানির বিলসহ নিয়মিত আয় বন্ধ আছে। ঈদের আগে বোনাস তো দূরের কথা, বেতন পাওয়া নিয়ে কর্মীরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
গত মে মাসে ঈদুল ফিতরের আগে পৌরকর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। করোনা পরিস্থিতিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ও পৌর কর্মচারীদের বেতন-ভাতা খাতে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এই ৪৫ কোটি টাকা দিয়ে পৌরসভাগুলোর এক মাসের বেতন-ভাতা দেওয়া হয়।
দেশের পৌরসভাগুলোতে কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রায় ৩৫ হাজার। এর মধ্যে স্থায়ী কর্মী সাড়ে ১২ হাজার। বাকি কর্মীরা চুক্তিভিত্তিক। ২০১৭ সালের জুনে বেতন-ভাতা অনিয়মিত ছিল দেশের ৬০ শতাংশ পৌরসভায়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, ২০১৫ সালে সরকার নতুন বেতন-স্কেল চালু করায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। কিন্তু পৌরসভাগুলোর আয় না বাড়ায় সমস্যা তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নগর উন্নয়ন অনুবিভাগ) জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গত ঈদে মানবিক দিক বিবেচনা করে কিছু বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। বারবার অনুদান দিয়ে পৌরসভাগুলোর বেতন-ভাতা চালানো যাবে না। আইন অনুযায়ী, পৌরসভাগুলোর কর্মীদের বেতন-ভাতা পৌরসভাকেই দিতে হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেকটা প্রতারণামূলকভাবে বহু পৌরসভা করা হয়েছে। এগুলোর কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়ম হলেও মন্ত্রণালয়ের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে হলে প্রতিষ্ঠানগুলোর রি-স্ট্রাকচারিং বা পুনর্গঠন প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারকেই উদ্যোগী হয়ে বাস্তবমুখী ও যুগোপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে।