আ.লীগ নেতার ট্রাকে অস্ত্র পাচারের বিষয়ে মুখ খোলেননি তিন আসামি
বগুড়ায় আওয়ামী লীগ নেতার সবজির ট্রাক থেকে ১০টি বিদেশি পিস্তল ও ১৩৬ বোতল ফেনসিডিল জব্দের মূল হোতা কারা, সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদে এখনো মুখ খোলেননি গ্রেপ্তার তিন আসামি। পাঁচ দিনের রিমান্ডে তাঁরা শুধু এটুকু জানিয়েছেন, অস্ত্রের চালানটি গাজীপুরের চান্দুরায় হাতবদলের কথা ছিল। আর এই অস্ত্র ও মাদক জয়পুরহাট থেকে তাঁদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন আক্কেলপুর উপজেলার মাদক ব্যবসায়ী জনি।
অস্ত্র পাচারের নেপথ্যে আর কারা রয়েছেন, সেই তথ্য জনির কাছে রয়েছে বলে গ্রেপ্তার আসামিরা জানিয়েছেন। তবে এখনো গ্রেপ্তার হননি অস্ত্র পাচার মামলার পলাতক আসামি জনি (২৬)।
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। পাঁচ দিনের রিমান্ডে অস্ত্রের চালান সম্পর্কে তেমন তথ্য না দেওয়ায় গ্রেপ্তার তিন আসামিকে আরও দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এই তিন আসামি হলেন সবজির ট্রাকে অস্ত্র বহনকারী জয়পুরহাট সদরের ভাদশা লালিপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে ছোটন (২০), ট্রাকচালক আক্কেলপুর উপজেলার কেশবপুর গ্রামের বাবু মণ্ডলের ছেলে কাবিল হোসেন (৩০) ও চালকের সহকারী নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার কার্তিকাহা গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে সেভেন হোসেন (৩০)।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বগুড়া জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক আছলাম আলী বলেন, গ্রেপ্তার তিন আসামিকে প্রথম দফায় পাঁচ দিন করে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে অস্ত্র পাচারের নেপথ্যে আর কারা আছে, সে ব্যাপারে তাঁরা তেমন কোনো তথ্য দেননি। এ কারণে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজ মঙ্গলবার আসামিদের আদালতে হাজির করে প্রত্যেকের পাঁচ দিন করে রিমান্ড আবেদন করা হয়। বিচারক দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, অস্ত্র ও মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত পলাতক আসামি জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার জনিকে ধরতে ডিবির একাধিক দল মাঠে রয়েছে। ডিবির ফাঁদে তাঁর আটকা পড়া এখন সময়ের ব্যাপারমাত্র। জনি আক্কেলপুর পৌর এলাকার পশ্চিম আমুট্ট মহল্লার মৃত সাচ্চু মিয়ার ছেলে। জনি পুলিশের নথিতে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী এবং তাঁর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য পাচার এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে ছয়টি মামলা রয়েছে।
২২ জুলাই ৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা নওগাঁর বদলগাছি থেকে রাজধানী ঢাকার পথে সবজিবাহী একটি ট্রাক থামিয়ে তল্লাশি অভিযান চালান। বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়কের বগুড়ার কাহালু উপজেলার ভাগ দুবড়া নামক স্থানে চালানো ওই তল্লাশি অভিযানে ট্রাকের কেবিনের ছাদে একটি স্কুলব্যাগ ও জুতার বাক্স পাওয়া যায়। স্কুলব্যাগে ১৩৬ বোতল ফেনসিডিল আর স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো জুতার বাক্স থেকে জব্দ হয় গুলিভর্তি ১০টি ওয়ান শুটার গান পিস্তল।
এ ঘটনায় ২২ জুলাই রাতে ৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) উপপরিদর্শক আতাউর রহমান বাদী হয়ে কাহালু থানায় একটি মামলা করেন। তবে মামলায় যে ট্রাক থেকে অস্ত্র ও মাদকের চালান জব্দ করা হয়েছে সেটির মালিকের নাম উল্লেখ করা হয়নি। মামলাটির তদন্তভার বগুড়া ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আছলাম আলীর ওপর ন্যস্ত করা হয়।
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে চালক ও তাঁর সহকারী জানিয়েছেন, সবজির আড়ালে অস্ত্রে চালান বহনকারী ট্রাকটির মালিক জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাহফুজ চৌধুরী ওরফে অবসর চৌধুরী।
এ বিষয়ে গোলাম মাহফুজ চৌধুরী দাবি করেন, ট্রাকটি তিনি কিস্তিতে কিনেছেন। চালক ছাড়া অন্যদের তিনি চেনেন না। বদলগাছি থেকে ঢাকায় সবজির চালান বহনের কথা চালক তাঁকে বলেছিলেন। তবে ট্রাকে অস্ত্র ও মাদক কীভাবে এল, সেটা মালিকের জানার কথা নয়।