সিরাজগঞ্জে ব্যস্ততা নেই কামারপাড়ায়

সিরাজগঞ্জের কামারখন্দের জামতৈল গ্রামের কামারপাড়ার কামারদের আগের মতো ব্যস্ততা নেই। রোববার তোলা ছবি। প্রথম আলো
সিরাজগঞ্জের কামারখন্দের জামতৈল গ্রামের কামারপাড়ার কামারদের আগের মতো ব্যস্ততা নেই। রোববার তোলা ছবি। প্রথম আলো

কয়েক দিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। এই ঈদে মুসলমানরা হাজার হাজার গবাদিপশু কোরবানি দেন। কিন্তু প্রতিবারের মতো সিরাজগঞ্জের কামারখন্দের কামারপাড়া সরব হয়ে ওঠেনি। সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও এই ঈদে কিছু বাড়তি আয়ের আশায় থাকেন কামারেরা। করোনা ও বন্যার কারণে এবার দা, চাপাতি ও ছুরির চাহিদা কমে গেছে। এ কারণে এগুলো তৈরির ফরমাশও তেমন আসছে না। ক্রেতার দেখা না পেয়ে তাই হতাশ কামারেরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর ঈদুল আজহার সময় কোরবানির গবাদিপশুর মাংস কাটার জন্য প্রচুর দা, চাপাতি, কুড়াল ও ছুরি প্রয়োজন হয়। এসব তৈরি করতে কামারেরা বছরের এই সময় থাকেন খুব ব্যস্ত। অথচ এবার করোনা ও বন্যার কারণে জেলার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ অনেক কষ্টে আছে। এ কারণে কোরবানির গরু–ছাগলের গোস্ত কাটার জন্য তাঁরা এসব উপকরণ কিনতে কামারপাড়ায় আসছে না। এ জন্য এখনো জমে ওঠেনি কামারপাড়া।

রোববার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, কামারখন্দের জামতৈল কামারপাড়ার কামারেরা খুব অল্পসংখ্যক দা, বঁটি, ছুরি, চাপাতি তৈরি করছেন। কোরবানির ঈদ কেন্দ্র করে এই সময়ে কামারদের ব্যস্ত সময় পার করার কথা থাকলেও সেই চিত্র চোখে পড়েনি।

জামতৈল গ্রামের বুদ্দু কর্মকার বলেন, এ বছর করোনার কারণে গত বছরের তুলনায় কাজ অনেক কম। এভাবে চলতে থাকলে একসময় এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
একই গ্রামের সুকুমার কর্মকার বলেন, ‘সারা বছর কোনোমতে কাজ করে সংসার চালাই। আমরা আশায় থাকি কোরবানির ঈদে বাড়তি আয় করব। কিন্তু এবার আর সে আশা মনে হয় পূরণ হচ্ছে না। করোনাভাইরাসের কারণে ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। কয়লা ও লোহার যে দাম, সেই দামের সঙ্গে সমন্বয় করে পণ্য বিক্রি করতে পারছি না।’

সুবাস কর্মকার বলেন, ‘এই পেশায় হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হয়। তবু যদি আশানুরূপ আয় করতে না পারি, তাহলে এ পেশা ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।’ তিনি আরও বলেন, শুধু কামারখন্দ উপজেলায় ৩০টি পরিবারের ৫০ জন সদস্য কামার।

এ বিষয়ে কামারখন্দ উপেজলা পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদুল্লাহ সবুজ বলেন, ‘আসলে এই দা, ছুরি ও চাপাতি তৈরির পেশার সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের আয়ের পরিমাণ খুবই কম। বছরের এই ঈদের সময়ে যে অতিরিক্ত আয় হয়, তা দিয়েই কোনো রকম চলে যায় সারা বছর। করোনা ও বন্যার কারণে এবার তাঁদের কাজের পরিমাণ খুবই কম। তাই কামারদের বাঁচাতে হলে তাঁদের পুনর্বাসন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।’