কুমিল্লার ব্যবসায়ী হত্যা: কাউন্সিলর আলমগীর যুবলীগ থেকে বহিষ্কার
কুমিল্লা নগরের চাঙ্গিনী এলাকার ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন হত্যা মামলার প্রধান আসামি কুমিল্লা মহানগর যুবলীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলমগীর হোসেনকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাত ১২টায় কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের নির্দেশে কুমিল্লা মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আলমগীর হোসেনকে সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বহিষ্কার করা হলো।
কুমিল্লা মহানগর যুবলীগের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের যুগ্ম আহ্বায়ক ও নিহত আক্তার হোসেনের ভাই শাহজালাল আলাল বলেন, ‘যারা হত্যা, খুনোখুনিসহ নানা ধরনের জুলুম ও অত্যাচারের সঙ্গে জড়িত, তারা যুবলীগে থাকতে পারে না। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এই বহিষ্কারের মাধ্যমে সেই বার্তাই দিয়েছেন। আমরা আশা করি, পুলিশ আলমগীরকে এখন গ্রেপ্তার করবে। হত্যাকাণ্ডের ১৫ দিনেও পুলিশ প্রধান আসামি আলমগীরকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।’
মামলার এজাহার ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ১০ জুলাই কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের চাঙ্গিনী দক্ষিণ মোড় বাইতুন নূর জামে মসজিদে জুমার নামাজ শেষে পারিবারিক বিরোধের জের ধরে কাউন্সিলর আলমগীর হোসেন ও তাঁর ভাই-ভাতিজারা মসজিদের মুসল্লি আক্তার হোসেনকে টেনেহিঁচড়ে বের করে মসজিদের বারান্দায় শত শত মানুষের সামনে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা ও কয়েকজনকে পিটিয়ে জখম করেন। এ ঘটনায় নিহত ব্যবসায়ীর স্ত্রী রেখা বেগম বাদী হয়ে ১০ জনের বিরুদ্ধে ঘটনার রাতে একটি হত্যা মামলা করেন।
পুলিশ এই মামলার তিন আসামি কাউন্সিলর আলমগীরের ভাই আমির হোসেন, বিল্লাল হোসেন ও জাহাঙ্গীর হোসেনকে ঘটনার দিনই গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে দুই দিনের রিমান্ড ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁরা কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও মামলার ১ নম্বর আসামি আলমগীর হোসেনসহ অপর ছয় আসামি গ্রেপ্তার হননি। অপর আসামিরা হলেন কাউন্সিলরের ভাই ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের উপসহকারী প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন, গুলজার হোসেন, গুলজারের ছেলে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নাজমুল ইসলাম ওরফে আলিফ ও গুলজারের আরেক ছেলে তানভীর হাসান, সদর দক্ষিণ উপজেলার তুলাতুলি এলাকার মো. ইউনুসের ছেলে কাউছার আহমেদ এবং আমির হোসেনের ছেলে জোবায়ের হোসেন।
আলমগীরকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটায় কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খানের সঙ্গে তাঁর গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামে দেখা করেছেন কুমিল্লা মহানগর ২৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও প্রয়াত আক্তার হোসেনের ছোট ভাই শাহজালাল আলাল। এ সময় তিনি হত্যাকাণ্ডের পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন। এর আগের দিন গত বুধবার দুপুরে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি ও আলমগীরের হুমকির প্রতিবাদে স্থানীয় সাংসদ, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দেন মামলার বাদীসহ পরিবারের সদস্যরা। গত রোববার চাঙ্গিনী মোড়ে আলমগীরকে গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধনও হয়।
মামলার বাদী রেখা বেগম বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের পর দুই শুক্রবার পেরিয়ে গেছে, কিন্তু প্রধান আসামি গ্রেপ্তার না হওয়া দুঃখজনক।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সদর দক্ষিণ মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জসিম উদ্দিন বলেন, ‘এখনো আলমগীর কাউন্সিলকে গ্রেপ্তার করতে পারিনি। তাঁর ফোন বন্ধ। চেষ্টা চলছে।’