বিশ্বের সর্ববৃহৎ জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসন প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারে জলবায়ু শরণার্থীদের জন্য বিশ্বের বৃহত্তম পুনর্বাসন প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন। এ সময় বন্যা ও নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তসহ দেশের সব জনগণের জন্য মুজিব বর্ষে আবাসন নিশ্চিত করতে তাঁর সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কক্সবাজারে ‘খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প’ নামের এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। কক্সবাজারের খুরুসকুলে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানস্থলে উদ্বোধনের পরেই প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ফ্ল্যাট পাওয়া পরিবারগুলোর হাতে ফ্ল্যাটের চাবি তুলে দেওয়া হয়।
এদিন কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল ইউনিয়নের বাঁকখালী নদীর তীরঘেঁষা বৃহৎ এ প্রকল্পে নির্মিত ২০টি পাঁচতলাবিশিষ্ট ভবনে ৬০০টি পরিবার নতুন ফ্ল্যাট পেল। প্রতিটি পাঁচতলা ভবনে থাকছে ৪৫৬ বর্গফুট আয়তনের ৩২টি করে ফ্ল্যাট। পর্যায়ক্রমে ৪ হাজার ৪০৯টি পরিবার এখানে ফ্ল্যাট পাবে।
প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন বুধবার এই প্রকল্প সম্পর্কে ব্রিফিংয়ে বলেন, প্রতিটি পরিবার এখানে ১০০১ টাকার বিনিময়ে একটি প্রায় ৪৫৬ বর্গফুটের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ফ্ল্যাট পাবে। যেখানে প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক র্যাম্প, সোলার প্যানেল, বিশুদ্ধ পানির সুবিধা, বিদ্যুৎ, স্যানিটেশন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও গ্যাস সিলিন্ডার সংবলিত চুলার ব্যবস্থা থাকবে।
প্রকল্প পরিচালক জানান, এই প্রকল্পে ২৫৩ দশমিক ৫৯ একর জমির ওপর নির্মাণাধীন ১৩৯টি পাঁচতলাবিশিষ্ট ভবনে ৪ হাজার ৪০৯টি পরিবার পুনর্বাসিত হবে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮০০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। প্রকল্প এলাকায় ২০ কিলোমিটার অভ্যন্তরীণ রাস্তা, ৩৬ কিলোমিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বর্জ্য পরিশোধন ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা, তীর রক্ষাবাঁধ, ছোট সেতু, ১৪টি খেলার মাঠ, মসজিদ, মন্দির, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পুলিশ ও ফায়ার স্টেশন, তিনটি পুকুর, নদীতে দুটি জেটি ও দুটি বিদ্যুতের সাবস্টেশন থাকবে।
মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘এটাই দেশের সবচেয়ে বড় আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য দেশের প্রথম আশ্রয়ণ প্রকল্প। জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারগুলোর জন্য এখানে যে পুনর্বাসন, এটাকে আমরা বিশ্বের বৃহত্তম জলবায়ু পুনর্বাসন প্রকল্প বলতে পারি, এ ধরনের প্রকল্প পৃথিবীতে বিরল।’
প্রকল্পের উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে মুজিব বর্ষ উদযাপন করছি। তাঁর জন্ম শতবর্ষে আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। প্রত্যেকটি মানুষকে যেভাবে পারি, গরিবানা হালে একটি চালা হলেও আমরা করে দেব।’
এ সময় বন্যা মোকাবিলায় তাঁর সরকারের সব ধরনের প্রস্তুতি থাকার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এবারে বন্যার প্রকোপটা একটু বেশি দেখা যাচ্ছে। এটা হচ্ছে শ্রাবণ মাস, হয়তো ভাদ্র মাসের দিকে আরও পানি আসবে অর্থাৎ আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরও বন্যার আশঙ্কা থাকতে পারে। আমাদের প্রস্তুতি আছে সেটা মোকাবিলা করার। সেই সাথে বন্যা এবং নদীভাঙনে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তাঁদেরও আমরা ঘরবাড়ি তৈরির জন্য জমির ব্যবস্থা করে দেব। সেটাও আমাদের লক্ষ্য রয়েছে এবং সে জন্য এবারের বাজেটে আমরা আলাদা করে টাকা বরাদ্দ রেখেছি।’
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে রক্ষা পেতে উপকূলবাসীকে বেশি করে গাছ লাগানোর পাশাপাশি দেশবাসীর প্রতি প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বানও জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজের গতি খুব ভালো ছিল। কিন্তু এই করোনাভাইরাস এসে সব জায়গাতেই একটা বাধার সৃষ্টি করেছে।’
কাজের দায়িত্বে নিয়োজিত সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এখন ২০টি ভবন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে বাকি ভবনগুলো নির্মাণ হবে। যেখানে সবকিছুই থাকবে, একটি আধুনিক শহর হিসেবেই খুরুশকুলকে গড়ে তোলা হবে।
অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ গণভবন থেকে এবং দশম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও এরিয়া কমান্ডার মো. মাঈন উল্লাহ চৌধুরী কক্সবাজার থেকে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউস ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন। পিএমও সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও প্রেসসচিব ইহসানুল করিম গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রকল্পের ওপর একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয় এবং প্রকল্প স্থানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তিনজন উপকারভোগী তিনটি গাছের চারাও রোপণ করেন। প্রধানমন্ত্রী পরে ভিডিও কনফারেন্সে উপকারভোগী এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।