বারনই নদে ছুটছে ইঞ্জিনচালিত ভেলা
বর্ষার সময় গ্রামে কলাগাছের ভেলায় চড়ে চলাফেরা ঘটনা অনেক পুরোনো। কিন্তু কেউ যদি ওই ভেলার সঙ্গে ইঞ্জিন লাগিয়ে দ্রুত চালানোর ব্যবস্থা করেন, তাহলে তা হবে চমকপ্রদ ঘটনা। এমন ঘটনাই ঘটেছে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলা সদরে। উপজেলার বারনই নদে ইঞ্জিনচালিত কলাগাছের ভেলা চলাচল করছে। শ্রমজীবী দুই বন্ধু সেন্টু মিয়া (২৪) ও রুস্তম আলীর (২৬) তৈরি করা এই কলাগাছের ভেলা সবার নজর কেড়েছে। শখ করে তাঁরা এই ভেলার নাম দিয়েছেন ‘বন্ধু ভেলা’।
সেন্টু মিয়া নলডাঙ্গা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের হলুদঘর মহল্লার মোজাহার আলী মণ্ডলের ছেলে এবং রুস্তম আলী একই মহল্লার আবদুল মাতবরের ছেলে। কৃষকের জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য শ্যালো মেশিন ভাড়া দিয়ে তাঁরা সংসার চালান।
হঠাৎ এই পদ্ধতিতে ভেলা চালানোর ধারণা কোথা থেকে পেয়েছেন, জানতে চাইলে সেন্টু মিয়া বলেন, এখন বর্ষায় চাষাবাদ নেই। তাই শ্যালো মেশিন বাড়িতে পড়ে ছিল। বন্ধু রুস্তম আলীর সঙ্গে পরামর্শ করে তাঁরা শ্যালো মেশিনগুলো কাজে লাগাতে চান। প্রতিদিন নৌকা ভাড়া দিয়ে তাঁদের নলডাঙ্গা বাজারে যাতায়াত করতে হয়। তা ছাড়া ওসব নৌকায় ইচ্ছামতো যাওয়া–আসাও করা যায় না। তাঁদের কাছে নৌকা কেনা বা তৈরি করার টাকাও নেই। কলাগাছ দিয়ে ভেলা বানিয়ে তাতে শ্যালো মেশিনজুড়ে দিলে দ্রুতগতিতে যাতায়াত করা সম্ভব। তাই তাঁরা কলাগাছের ভেলা বানান। পরে ভেলার পেছনের দিকে শ্যালো মেশিন জুড়ে দেন। এতে ভেলাটি নৌকার মতোই দ্রুতগতিতে ছুটতে শুরু করে।
মঙ্গলবার দুপুরে নলডাঙ্গা বাজারের পাশে বারনই নদের ঘাটে উৎসুক জনতার ভিড় দেখা যায়। সবার দৃষ্টি শ্যালো ইঞ্জিনচালিত কলাগাছের ভেলার দিকে। সবাই এই ভেলা নিয়ে খুঁটিনাটি জিজ্ঞাসা করছিলেন ভেলার চালক রুস্তম আলীকে। রুস্তম আলীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেল, তাঁরা শখ করে ভেলাটির নাম দিয়েছেন ‘বন্ধু ভেলা’। বন্ধু ভেলা বানাতে তাঁদের খরচ হয়েছে মাত্র ২০০ টাকা। সর্বোচ্চ এক মণ মাল ও দুজন যাত্রী নিয়ে ভেলাটি যেকোনো গভীরতার পানিতে চলাচল করতে পারে। ডিজেল দিয়ে চালানোর ফলে জ্বালানি খরচও কম লাগে। তাঁরা এটাকে এখনো ভাড়ায় চালান না। তবে ভবিষ্যতে ভাড়ায় চালানোর ইচ্ছা আছে তাঁদের। তাঁদের দেখাদেখি অনেকেই এ ধরনের ভেলা বানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
একই উপজেলার হালতি বিলে স্পিডবোট চালান শাহজাহান দেওয়ান। তিনি এই ভেলা সম্পর্কে বলেন, দু-একজনের যাতায়াতের জন্য এ ধরনের ভেলা ব্যবহার করা যায়। এতে কিছু মালামালও বহন করা যাবে। তবে এতে দিক পরিবর্তনের ব্যবস্থা না থাকায় চলাচল কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া ঢেউ থাকলে তো ভেলা চালানোই উচিত হবে না। কলাগাছ পচনশীল। তাই ভেলার স্থায়িত্বের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।