ফেরিতে উঠতে না পেরে খুবই কষ্টে ট্রাকচালকেরা
এক সপ্তাহ ধরে পদ্মায় প্রবল স্রোতের কারণে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচল। রাতে নৌপথে দুর্ঘটনা এড়াতে গত দুদিন ধরে সন্ধ্যা সাতটার পর থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হচ্ছে। দিনের বেলায় থেমে থেকে চলছে মাত্র ছয়টি ফেরি। ফেরি চলাচল সীমিত হয়ে পড়ায় ঘাটের উভয় পাড়ে আটকা পড়েছে প্রায় ৯০০ যানবাহন।
ফেরি চলাচল ব্যাহত হলেও স্বাভাবিক আছে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল। প্রবল স্রোত আর ঢেউ উপেক্ষা করে ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলছে। এতে করে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কাঁঠালবাড়ি কার্যালয় সূত্র জানায়, চার দিন ধরে পদ্মার পানি বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পদ্মায় পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় নদীর বিভিন্ন অংশে দেখা দেয় প্রবল স্রোত। মাঝপদ্মায় বেড়েছে ঢেউ। পদ্মার পানি বিপৎসীমার ওপরে থাকায় উভয় ঘাটের বেশির ভাগ পন্টুনের চারপাশ তলিয়ে যায়। ইট-বালু ফেলে পন্টুন উঁচু করে উভয় পাড়ের চারটি ঘাটে সীমিত আকারে যানবাহন নামানো-ওঠানো হচ্ছে। স্রোতের বেগ বেশি থাকায় এই নৌপথে চলাচলকারী ১৯টি ফেরির মধ্যে আজ বুধবার সকাল থেকে চলছে দুটি রো রো, দুটি কে-টাইপ ও দুটি ছোট ফেরি। এই ছয়টি ফেরি নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ সময় নিয়ে পদ্মা পার হচ্ছে।
আজ দুপুরে কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট ঘুরে দেখা যায়, ঘাটের ১,২ ও ৪ নম্বর টার্মিনাল পণ্যবাহী ট্রাকে ভর্তি। সংযোগ সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। এর মধ্যে পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যা বেশি। ফেরি চলাচল সীমিত থাকায় যাত্রীরা লঞ্চ ও স্পিডবোটে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছেন। অনেকে ঝুঁকি জেনেও বিকল্প নৌপথ পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ব্যবহার করছেন।
কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ১ নম্বর টার্মিনালে সাত দিন ধরে অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন পণ্যবাহী ট্রাকের চালক সেকেন্দার আলী। তিনি বলেন, ‘আমাগো ঘাটের মানুষ মানুষ বইলা মনে করে না। কিছু জিজ্ঞাস করলেই ধমক দেয়। বলে, বেশি কথা বললে এক মাসেও ফেরিতে উঠতে দেবে না।’ তিনি বলেন, তাঁর ট্রাক খুলনা থেকে মাল (চিনিগুঁড়া চাল) নিয়ে মুন্সিগঞ্জে যাবে। এখনো ফেরিতে উঠতে পারেননি। কবে পারবেন জানেন না। প্রতিদিন ঘাটের লোকদের বলেন। ফেরিও কমবেশি চলে, কিন্তু তাঁদের তোলে না।
টার্মিনালে আটকা পড়া আরেক ট্রাকচালক লিটন ফকির বলেন, ‘অলস পড়ে আছি। কোনো আয় নাই। ঘাটে তিন বেলা চারটে ডালভাত খেলেও ২০০ টাকা লাগে। না খেয়ে তো আর বাঁচা যায় না। কয়েক দিন ধরে গ্রামের বাড়িতে টাকাও পাঠাতে পারি নাই। বাড়িতে ওরাও খুব কষ্টে আছে।’
শুধু লিটন বা সেকেন্দার নন, ঘাটের টার্মিনালে আটকা পড়া প্রতিটি ট্রাকের চালক পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। পারাপারের অপেক্ষায় থেকে তাঁরা বিকল্প নৌপথেও যেতে পারছেন না।
জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক আবদুল আলীম বলেন, ‘শুধু ট্রাকচালকেরাই কেন? আমরা সবাই খুব কষ্টে আছি। আমরা ফেরি ঠিকমতো চালাতে পারছি না। দুর্ঘটনা এড়াতে রাতে ফেরি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ঘাটে চারপাশে গাড়ির চাপ সামলাতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ট্রাকচালকেরা তো কথা শোনে, ব্যক্তিগত ছোট গাড়ির চালকেরা ফেরিতে ওঠার জন্য তাড়াহুড়া করে, তারা কথা শোনে না।’
আবদুল আলীম বলেন, স্রোতের কারণে তাঁরা ছয়টা ফেরি চালাচ্ছেন। তাও পারাপারে দ্বিগুণেরও বেশি সময় লাগছে। নদীর স্রোত কিছুটা কমে এলেই পরিস্থিতি ঠিক হবে।
কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আশিকুর রহমান বলেন, ফেরি কম চলায় গাড়ির চাপ বেশি। টার্মিনাল-ভর্তি গাড়ি। লাইনে থাকা গাড়ির মধ্যে পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যাই বেশি। কাঁঠালবাড়ি ঘাটে প্রায় ৫০০ গাড়ি আটকা রয়েছে, ওপারেও একই অবস্থা।