বন্যার্তদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিল পুলিশ, দিল সহায়তা
বেলা তখন ১১টার মতো। স্পিডবোট থেকে পুলিশ সুপারসহ কয়েকজন কর্মকর্তা ভাগনগরকান্দি গ্রামের পানিবন্দী একটি বাড়ির পাশে নামেন। দূর থেকে দেখে গ্রামের লোকজন অজানা আতঙ্কে এদিক–ওদিক চলে যাচ্ছিলেন। পুলিশ সুপার নিজেই তাঁদের থামতে বললেন। তাঁকে দেখে গ্রামবাসী ভয় পেয়েছেন কি না, জানতে চাইলেন। কেউ কেউ মাথা নিচু করে বললেন, ‘স্যার আমরা মনে করছিলাম আপনেরা কাউকে ধরতে আইছেন। তাই ঝামেলা এড়াতে সরে পড়ছিলাম।’ পরে যখন তাঁদের কাছে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির কথা শুনে চালের ব্যাগ ধরিয়ে দেন, তখন অনেকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলেন। দ্রুত এ খবর ছড়িয়ে পড়ল গ্রামে। মুহূর্তে পানিবন্দী মানুষের ঢল নামল সেখানে। এভাবে আজ নাটোর জেলা পুলিশের দল শনিবার দিনভর সিংড়া উপজেলার শতাধিক বন্যাপীড়িত পরিবারের মধ্যে খাদ্যসহায়তা পৌঁছে দিয়েছে।
নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহার নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল খাদ্যসামগ্রী নিয়ে স্পিডবোটে সিংড়ার শেরকোল ইউনিয়নের জোড়মল্লিকা, ভাগনগরকান্দি এবং পৌরসভার মশিন্দা ও পরানহাটি এলাকায় যায়। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে দুর্গত পরিবারগুলোকে ১০ কেজি করে চাল দিয়ে আসে।
সিংড়া পৌর এলাকার পরানহাটি এলাকার জাবেদ আলী প্রাং বলেন, অস্ত্রপাতি ছাড়াই কিছু পুলিশ তাঁদের গ্রামে ঢুকে, যাঁদের বাড়িতে পানি উঠেছে তাঁদের খুঁজে খুঁজে বের করে। পরে তারা প্রত্যেককে এক ব্যাগ করে চাল দিয়ে গেছে। প্রথমে তাঁরা ভেবেছিলেন পুলিশ হয়তো আসামি ধরতে এসেছে। ত্রাণ দেওয়ার বিষয়টি জানার পর ক্ষুধার্ত লোকজন তাদের কাছে ছুটে যান। চাল শেষ হওয়ার পর কিছু লোককে তারা টাকাও দিয়েছে।
পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, ‘জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে যেমনভাবে করোনায় দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছি, তেমনি বন্যাদুর্গতদের সঙ্গেও আমরা আছি। আমরা আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে আজ ১০০টি পরিবারকে চাল দিয়েছি। আগামী দিনে এ ধরনের মানবিক সহায়তা অব্যাহত থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা প্রত্যেকের বাড়িত বাড়ি গিয়ে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছি।’
বন্যার্তদের ত্রাণ বিতরণে নাটোরের পুলিশ সুপার ছাড়াও সিংড়া-গুরুদাসপুর সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মো. জামিল আকতার, সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর-ই আলম সিদ্দিকী প্রমুখ অংশ নেন।
পুলিশের ত্রাণ বিতরণকালে স্থানীয় সাংসদ তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ সিংড়ার অন্য একটি এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করছিলেন। পুলিশের ত্রাণ বিতরণের বিষয়টি তাঁর নজরে আনলে তিনি পুলিশকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, করোনাকালে পুলিশ নিজেদের জীবন বাজি রেখে যেভাবে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, তেমনি বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এটা অন্যান্য বাহিনীর জন্য অনুসরণীয় হতে পারে।