গ্রামেও অনলাইনে চলছে গরু বিক্রি
ছোট্ট একটি কার্যালয়। চারটি কম্পিউটারের সামনে বসে আছেন চারজন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখানো হচ্ছে গরুর ছবি ও ভিডিও। চলছে দর-কষাকষি। ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে দাম ঠিক হলেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে গরু। ট্রাকে গরু পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ক্রেতার ঠিকানায়। ঈদুল আজহা উপলক্ষে অনলাইনে গরু বিক্রি করছেন পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার চৌবাড়িয়া হারুপাড়া গ্রামের মৃত্তিকা ডেইরি ফার্ম। করোনা পরিস্থিতিতে ক্রেতা না পেয়ে খামার কর্তৃপক্ষ এভাবে গরু বিক্রি করছে।
করোনা পরিস্থিতির কারণে এলাকার কোরবানির পশুর হাটে কেনাবেচা একেবারেই কম। উপরন্তু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কায় অনেকেই হাটে আসতে চাচ্ছেন না। এই পরিস্থিতিতে মৃত্তিকা ডেইরি ফার্মের মতো বেশ কয়েকজন খামারমালিক গ্রামে বসেই অনলাইনে গরু বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছেন। এতে সাড়াও মিলেছে বেশ।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলাটি চলনবিলের মধ্যে পড়েছে। চারদিকে সবুজ আর সবুজ। এই উপজেলার গরুর খামারের জন্য খ্যাতি রয়েছে। উপজেলায় প্রায় ৮০০টি গরুর খামার রয়েছে। দুধ উৎপাদনের পাশাপাশি এসব খামারে গরু মোটাতাজাকরণ কার্যক্রম চলে। প্রতিবছর ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে খামারিরা গরু পালন করেন। ঈদের আগে বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা এসে খামার থেকে গুরু কিনে নিয়ে যান। চলতি মৌসুমেও এসব খামারে প্রায় পাঁচ হাজার গরু পালন করা হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে খামারগুলোতে সেভাবে ক্রেতার দেখা মিলছিল না। এ কারণে স্থানীয় খামারিরা অনলাইনে গরু বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী তাঁরা সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে গরুর ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দিতে থাকেন।
মৃত্তিকা ডেইরি ফার্মের মালিক আবদুল কাদের জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে খামার চালাচ্ছেন। আগেও অনলাইনে গরু বিক্রি করেছেন। চলতি মৌসুমে কোরবানির জন্য ১৫০টি গরু পালন করেছেন। এর মধ্যে ১১০টি গরু বিক্রির উপযোগী হয়েছিল। কিন্তু করোনার কারণে ক্রেতা পাচ্ছিলেন না। পরে অনলাইনে গরু বিক্রি করা শুরু করেন। অনলাইনে মাত্র ১৫ দিনে তাঁর ৯০টি গরু বিক্রি হয়েছে। বাকি গরুগুলো বিক্রির জন্য দামদর চলছে।
মৃত্তিকা ডেইরি ফার্মের অনলাইন কার্যক্রমের সমন্বয়ক শাহিবুল ইসলাম জানান, প্রথমে তাঁরা খামার থেকে গরুর ছবি ও ভিডিও নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এতে তাঁরা গরুর জাত, এর আনুমানিক ওজন ও দাম বলে দিচ্ছেন। গরুর ছবি, ভিডিও ও বিস্তারিত বর্ণনা দেখে ক্রেতারা অনলাইনেই দরদাম করছেন। দামে মিললে ক্রেতারা ঠিকানা দিচ্ছেন। পরে ঠিকানা অনুযায়ী ট্রাকে ক্রেতার বাড়িতে গরু পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
জিসান ডেইরি ফার্ম নামে অপর একটি খামারের মালিক সুলতান আহম্মেদ জানান, ঈদুল আজহায় বিক্রির জন্য তিনিও ৭০টি গরু লালন-পালন করে বড় করেছেন। কিন্তু করোনার কারণে গরু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। হাটে নিয়ে গরু বিক্রি করতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়ার ভয় কাজ করছিল। তাই তিনি অনলাইনে গরু বিক্রি শুরু করেছেন। তাঁর খামারের অধিকাংশ গরু বিক্রি হয়ে গেছে।
এ প্রসঙ্গে ভাঙ্গুড়া পৌরসভার মেয়র গোলাম হাসনাইন বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে হাটে গরু বিক্রি হতো। ঈদের আগে প্রতি হাটে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার গরু বিক্রি হতো। কিন্তু করোনার কারণে এবার হাটে ক্রেতা নেই। হাটে গরু বিক্রি কমে এক হাজারে নেমে এসেছে। ফলে খামারিদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা অনলাইনে গরু বিক্রির ব্যবস্থা করেছি। এতে বেশ ভালো সাড়া পাওয়া গেছে।’
মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার বাসিন্দা সালেহ আহম্মেদ। তিনি একজন ব্যবসায়ী। তিনি ভাঙ্গুড়ার মৃত্তিকা ডেইরি ফার্ম থেকে কোরবানির জন্য ১১টি গরু কিনেছেন। সালেহ আহম্মেদ বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও দেখে গরু পছন্দ করেছি। তারপর দরদাম করে কেনা হয়েছে। অনলাইনে দেখে গরু কিনতে খুব সুবিধা হয়েছে। যেমন দেখেছিলাম, তেমন গরু পেয়েছি। লেনদেনেও কোনো সমস্যা হয়নি। নিরাপদ থেকে এভাবে কোরবানির গরু কিনতে পেরে আমি খুশি।’
ভাঙ্গুড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘গরুর হাটে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা খুব কঠিন। এ ক্ষেত্রে অনলাইন গরুর হাট বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখছে। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে পড়ারও কোনো ভয় কাজ করছে না। আমরা পুরো বিষয়টি তত্ত্বাবধান করছি। অনলাইনে বেশ ভালো সাড়া মিলছে। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষই নিরাপদ থাকছেন।’