ঈদের টিকিটের দাম কমিয়েও আকাশপথে যাত্রী মিলছে না

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রুহানা কামাল, একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা। প্রতিবছর ঈদের সময় বাড়ি ফিরতে আকাশপথকে বেছে নিতেন। স্বাচ্ছন্দ্যে ও কম সময়ে আসা–যাওয়া করার জন্য ঢাকা–যশোর রুটের টিকিট আগেভাগেই কাটতেন। কিন্তু এবার আর সেই তাড়া নেই রুহানার। স্বামী ও পাঁচ বছরের মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় কোরবানির ঈদ করবেন। কারণ একটাই, করোনাভাইরাসের মহামারি।
রুহানা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোরবানির ঈদে বেশি আনন্দমুখর হয়। ব্যাংকে ঈদের আগেও লেনদেন হয়। ছুটি কম পাওয়া যায়। তাই সময় বাঁচাতে প্লেনের টিকিট কাটতাম। এবার আর সেটি হচ্ছে না। রোজার ঈদ ঢাকায় করেছি। ইচ্ছা ছিল কোরবানির ঈদ খুলনায় করব। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি বলেই মনে হচ্ছে। তাই ঝুঁকি এড়াতে ঢাকাতেই থাকব। তা ছাড়া ছুটিও কম। শুক্র ও শনিবার ঈদের ছুটির মধ্যে পড়েছে।’
রুহানা কামালের মতো বহু মানুষই এবার ঢাকা ছেড়ে ঘরমুখী হচ্ছে না। তাই ঈদে আকাশপথের টিকিটের চাহিদা নেই বললেই চলে। অথচ অন্যান্যবার ঈদের সময় আকাশপথের টিকিট যেন সোনার হরিণ। তিন গুণ মূল্য দিয়েও টিকিট হাতের কাছে মেলে না।
এই তো ২০১৯ সালের ঘটনা। জুনে রোজার ঈদের আগেই আগস্ট মাসে কোরবানির ঈদে বাড়ি ফেরার অর্ধেক টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। নভোএয়ারের এক কর্মকর্তা জানান, গত বছর কোরবানির ঈদের এক মাস আগেই তাঁদের অভ্যন্তরীণ রুটের ৭০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। ঈদ ঘনিয়ে আসায় গত বছর ঈদের আগে ছয় দিন বাড়তি ফ্লাইট দিয়েছিলেন যশোর ও সৈয়দপুর রুটে। অভ্যন্তরীণ রুটগুলোর মধ্যে এই দুটি গন্তব্যে ঝক্কি–ঝামেলা বেশি থাকে ঈদের সময়। তাই বাড়তি ফ্লাইট দেওয়া হতো।
দেশের বিমান সংস্থাগুলো ঈদসহ বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবগুলো সামনে রেখে প্রায় এক বছর আগে থেকে টিকিট বিক্রির কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে। তাদের মতে, ঈদের সময়টা সবারই জানা থাকে। এক দিন এদিক-ওদিক হতে পারে। তাই টিকিট বিক্রিও শুরু হয়ে যায় আগেভাগেই। যাত্রীরা সুবিধাজনক সময়ে বিমান সংস্থাগুলোর বিক্রয়কেন্দ্র ও বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি থেকে টিকিট কিনে থাকেন। অনলাইনে ক্রেডিট কার্ড ছাড়াও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টিকিট কিনে থাকেন অনেক যাত্রী। কিন্তু এবার এয়ারলাইনসগুলো পরিকল্পনা করলেও সব মাটি হয়ে গেছে করোনার কারণে।

ঢাকা থেকে অভ্যন্তরীণ সাতটি রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ইউএস–বাংলা, নভোএয়ার ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। তবে করোনার কারণে রিজেন্ট এয়ারের ফ্লাইট বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। যাত্রী না পাওয়ায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসও অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ রেখেছে। সীমিত পরিসরে ঢাকা থেকে যশোর, সৈয়দপুর, সিলেট, বরিশাল ও চট্টগ্রামে ফ্লাইট চলছে ইউএস–বাংলা ও নভোএয়ারের। ঈদকে কেন্দ্র করে টিকিট বিক্রি নেই বললেই চলে। নভোএয়ার ২০১৯ সালে ঈদের আগে ছয় দিনে অতিরিক্ত ৩০টি ফ্লাইট পরিচালনা করেছিল বলে জানান নভোএয়ারের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক (মার্কেটিং) এ কে এম মাহফুজুল আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন ঈদের সময়টি ২ হাজার ১০০–এর বেশি যাত্রী বহন করতে পারি। এবারও ঈদে বেশি যাত্রী বহনের প্রস্তুতি আগাম নিয়েছিলাম। কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। তা ছাড়া ঈদের মাসখানেক আগে থেকেই প্রচুর মানুষ কেনাকাটার জন্য কলকাতায় যেত। তারা যশোর হয়ে সড়কপথে বেনাপোল দিয়ে কলকাতা যেত। আবার ব্যবসার কারণেও যাতায়াত ছিল। এখন তো বর্ডারই বন্ধ।’

ঈদের আগে ২৯ ও ৩০ জুলাইয়ের টিকিটের কিছুটা চাহিদা রয়েছে। অনেকে বুকিং দিয়েছেন। বাকিটা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে বলে জানান ইউএস–বাংলা এয়ারলাইনস লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (মার্কেটিং সাপোর্ট অ্যান্ড পিআর) কামরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, চাহিদা বেশি থাকায় কম দামে বা লো অফারে ঈদের সময় কখনোই টিকিট কেনা যেত না। আসলে ঈদের সময় ঢাকা থেকে যাত্রী পূর্ণ করে ছাড়ছে। কিন্তু ফ্লাইটগুলো ফিরত একেবারে ফাঁকা। কিন্তু এবারের চিত্র সম্পূর্ণ আলাদা। তা ছাড়া ঈদে এবার দীর্ঘ ছুটি নেই। এক দিন বা দুই দিন ছুটি যোগ হলে বাড়ি যাওয়ার চিন্তা করতেন। সেই সুযোগও নেই।

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে করোনার আগে অভ্যন্তরীণ রুটে প্রতিদিন প্রায় ১০০টি ফ্লাইটে ছয় হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করত। ঈদ উপলক্ষে প্রায় ৪০ হাজার যাত্রী আকাশপথে ঢাকা ছাড়ত। কিন্তু এবার প্রতিদিন হাজারখানেক যাত্রী ঢাকা ছাড়বে কি না, সন্দেহ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

তাই যাত্রী টানতে টিকিটের দাম কমিয়ে দিয়েছে ইউএস–বাংলা ও নভোএয়ার। বেসরকারি এ দুটি বিমান সংস্থা ফ্রিকোয়েন্ট ফ্লায়ার প্রোগ্রাম স্মাইলস অষ্টম বর্ষে পদার্পণ করেছে। এ উপলক্ষে নভোএয়ার তাদের টিকিটের মূল্যে ১০ শতাংশ ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে। এই অফারে ৩১ জুলাই পর্যন্ত স্মাইলস সদস্যরা নভোএয়ারের বিক্রয়কেন্দ্র, ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট কিনতে পারবেন।
অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ সব রুটে ভাড়ার ওপর ১২ শতাংশ মূল্যছাড় দিয়েছে ইউএস–বাংলা এয়ারলাইনস। করোনা পরিস্থিতিতে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের নিজস্ব ওয়েবসাইটে কিংবা মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করে টিকিট কেনা যাবে। তাদের এই সুযোগ পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত চলবে।
এই হিসাবে ২ হাজার ৩০০ টাকার মধ্যে অভ্যন্তরীণ যেকোনো রুটে আকাশপথের টিকিট পাওয়া যাবে।