উত্তরার পর রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর শাখাও সিলগালা
চুক্তি ভঙ্গ করে করোনা রোগীদের থেকে বিল আদায়, ভুয়া প্রতিবেদন তৈরিসহ নানা অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর শাখাটি আজ বুধবার সিলগালা করে দিয়েছে র্যাব। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার একই অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা শাখায় অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেয় র্যাব।
প্রতারণার অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের নামে মামলা করা হয়েছে। আটজনকে আটক করা হয়েছে। সাহেদসহ নয়জন পলাতক রয়েছেন।
বুধবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মিরপুর ১২ নম্বরে অবস্থিত রিজেন্ট হাসপাতালটি র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের নেতৃত্বে একটি দল সিলগালা করে দেয়। এ হাসপাতালটি করোনা রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত সেখানে ২২ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছিল। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে গতকালই রোগীদের অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য বলা হয়। রোগীরা হাসপাতালটি বন্ধ করে দেওয়ার আগেই সেখান থেকে চলে যান।
র্যাবের অভিযানকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, মিরপুর ১২ নম্বরের রিজেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসক, হাসপাতালের মালিকদের প্রতিনিধি ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত কেউ ঘটনাস্থলে ছিলেন না। মিরপুর রিজেন্ট হাসপাতালের অনুমতির মেয়াদ ২০১৭ সালেই শেষ হয়ে যাওয়ার পর আর নবায়ন করেনি। ২০১৮ সালে মিরপুরের এ হাসপাতালটি র্যাব অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেছিল আট লাখ টাকা। তখন হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তাদের অনুমতির নবায়ন হয়নি ও রোগ শনাক্তকরণ মেয়াদ উত্তীর্ণ রিএজেন্ট দিয়ে পরীক্ষা চালানো হচ্ছিল।
অভিযান সম্পর্কে জানতে চাইলে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, রিজেন্টের মিরপুর শাখার হাসপাতালটি করোনা রোগীর চিকিৎসায় নানা প্রতারণা করেছে। তারা রোগীদের স্যাম্পল নিয়ে পরীক্ষা না করে ফেলে দিত, অথচ প্রতিটি পরীক্ষার জন্য ৩৫০০ টাকা নেওয়া হতো। ২০১৮ সালে মিরপুরের এই হাসপাতালে আমি অভিযান চালিয়ে জরিমানা করে সতর্ক করে দিয়েছিলাম।
রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ, হাসপাতালটি করোনার নমুনা পরীক্ষা না করে ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করত। হাসপাতালটির সঙ্গে সরকারের চুক্তি ছিল ভর্তি রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার। সরকার এই ব্যয় বহন করবে। কিন্তু তারা রোগীপ্রতি লক্ষাধিক টাকা বিল আদায় করেছে । রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দিয়েছে এই মর্মে সরকারের কাছে ১ কোটি ৯৬ লাখ টাকার বেশি বিল জমা দেয়। রিজেন্ট হাসপাতাল এ পর্যন্ত শ দুয়েক কোভিড রোগীর চিকিৎসা দিয়েছে।
সরকারের সঙ্গে চুক্তি ছিল ভর্তি রোগীদের তারা কোভিড পরীক্ষা করবে বিনা মূল্যে। কিন্তু তারা আইইডিসিআর, আইটিএইচ ও নিপসম থেকে ৪ হাজার ২০০ রোগীর বিনা মূল্যে নমুনা পরীক্ষা করিয়ে এনেছে। পাশাপাশি নমুনা পরীক্ষা না করেই আরও তিন গুণ লোকের ভুয়া করোনা রিপোর্ট তৈরি করে। এসব অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রিজেন্ট হাসপাতালের দুটি শাখা বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।