ঘরের ভেতর দুই-তিন ফুট পানি
চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় চরপাথালিয়া গ্রামে সরকারি উদ্যোগে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৩৫টি ঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব ঘরের মেঝ ও বারান্দা দুই-তিন ফুট পানির নিচে। ১৫ দিন ধরে সেখানকার শতাধিক লোক পানিবন্দী হয়ে আছেন। ত্রাণসামগ্রী না পাওয়ায় খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাঁদের।
আজ মঙ্গলবার সকালে ওই সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সেখানকার পাঁচটি একতলা ব্যারাকের (ভবন) প্রতিটি ঘরের মেঝ ও বারান্দা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ভবনগুলোর সামনের মাঠও তলিয়ে গেছে পানিতে। এসব ভবনে বসবাসরত ১৫টি পরিবারের শতাধিক লোক পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। কেউ কেউ ঘরের মেঝে ইট বিছিয়ে চৌকি উঁচু করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে গাদাগাদি করে থাকছেন। উপায় না দেখে দু-তিনটি পরিবার পাশের বেড়িবাঁধে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন তাঁরা।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ‘চার মাস আগে পরিবার নিয়া এনো উঠছি। কয়েক দিন ধইরা ধনাগোদা নদী ও বন্যার পানি বাড়তাছে। ১০-১২ দিন আগে আমাগো ঘরের মেঝ ও বারান্দা পানির নিচে ডুইব্বা যায়। ঘরের সামনের মাঠটাতেও চার-পাঁচ ফুট পানি। পানির লাইগা ঘর থেইক্কা বাহির অইতে পারতাছি না। খাডের নিচে ইট বিছাইয়া উঁচু কইরা কোনোরহমে আছি। একটা খাডে গাদাগাদি কইরা রাইত কাডাই। পায়খানা-প্রস্রাব করনেরও জায়গা নাই। কারও কাছ থেইকাই এহন পর্যন্ত ত্রাণসামগ্রী পাই নাই। পরিবার নিয়া খাইয়া না খাইয়া আছি। এইডা যে কী কষ্ট, তা বুঝাইতে পারুম না। কোনো জায়গায় যাওনের জায়গাও আমাগো নাই।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগে গত বছরের মাঝামাঝিতে উপজেলার চরপাথালিয়া গ্রামে ধনাগোদা নদীর তীরে আট একরের বেশি জায়গায় গরিব-দুস্থ, গৃহ ও ভূমিহীন পরিবারের জন্য ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের গৃহনির্মাণের কাজ শুরু হয়। সেনাবাহিনীর তদারকিতে ৫টি ভবনে ১৩৫টি কক্ষ নির্মাণ করা হয়। এতে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয় হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা হক বলেন, গত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসব ঘর তাঁর প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর ঘরের বরাদ্দ দেওয়ার জন্য মতলব পৌর এলাকার গরিব-দুস্থ ও গৃহহীন লোকদের কাছ থেকে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়। ৫০টি পরিবার ঘরের জন্য আবেদন করলেও নানা কারণে সবাইকে ঘর বরাদ্দ দেওয়া যায়নি। ১৫টি পরিবারকে প্রাথমিকভাবে একটি করে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়।
ইউএনও আরও বলেন, নিচু জায়গায় প্রকল্পটির ঘরগুলো নির্মাণ করায় বন্যা ও নদীর পানি সেখানে প্রবেশ করেছে। সেখানকার পরিবারগুলোর খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তাঁর প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের সব রকমের সহায়তা দেওয়া হবে।