গ্যাসের আগুনে পুড়ল গোটা সংসার
ময়মনসিংহের নান্দাইলের বাসিন্দা আবুল কাশেম ও ফাতেমা বেগম। কাজ করেন ঢাকার সাভারের আশুলিয়া এলাকার পোশাক কারখানায়। সেখানেই বাসাভাড়া নিয়ে থাকতেন। তাঁদের সঙ্গে ছিল ১০ বছরের ছেলে আল আমীন। কিন্তু তাঁদের সাজানো সংসার তছনছ হয়ে গেছে একনিমেষেই। গ্যাসের লাইন লিকেজের কারণে অগ্নিকাণ্ডে তাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন।
গত সোমবার এ ঘটনার পর কাশেম ও আল আমীন মারা যান। আর গুরুতর আহত ফাতেমা আজ মঙ্গলবার বিকেলে মারা যান। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা ঘটনাটিকে বাড়ির তত্ত্বাবধায়কের অবহেলা ও অবৈধ গ্যাসের সংযোগে লিকেজের কারণে ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন। তাঁরা ঘটনার তদন্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের দাবি করেছেন। তবে ঘটনার দুই দিন পার হলেও পুলিশ কোনো খোঁজ নেয়নি।
পরিবারের সদস্যরা বলেন, ফাতেমারা আশুলিয়া থানার আশুলিয়া ইউনিয়নের দুর্গাপুর চালা গ্রামের শহীদ হাজির (বাড়িটি হাজিবাড়ি নামে পরিচিত) বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। গতকাল সোমবার ভোরে ফাতেমা রান্নার আয়োজন করেন। তখন তাঁর স্বামী ও সন্তান ঘুমিয়েছিলেন। যাবতীয় আয়োজন শেষ করে ফাতেমা দিয়াশলাইয়ের কাঠি জ্বালানো মাত্রই বিকট শব্দ করে পুরো কক্ষে আগুন ধরে যায়। ঘটনাস্থলেই আল আমীন মারা যান। বাকি দুজন গুরুতরভাবে দগ্ধ হন। বিকট শব্দ শুনে স্থানীয়রা এসে অগ্নিদগ্ধ আবুল কাশেম ও ফাতেমাকে বাড়ি থেকে উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
হাসপাতালে নেওয়ার পথে কাশেমের মৃত্যু হয়। ফাতেমাকে এনাম মেডিকেলে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু পরিবারের পক্ষে অর্থ জোগান দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় স্বজনেরা তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে আসেন। আজ বিকেলে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের সময় তিনি মারা যান। তাঁর লাশ দাফনের প্রক্রিয়া চলছে। অন্যদিকে ময়মনসিংহের নান্দাইল পৌরসভার চণ্ডীপাশা মহল্লায় আবুল কাশেম ও তাঁর ছেলে আল আমীনের দাফন গত সোমবার রাতে সম্পন্ন হয়েছে।
ফাতেমার বড় ভাই মো. আবু সাইদ বলেন, কাশেম ও ফাতেমা তাঁদের বলেছিলেন, ওই বাড়িতে গ্যাসের সংযোগ থাকলেও সেটি বৈধ ছিল না। আগে তাঁরা রান্নার কাজে এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার করতেন। সম্প্রতি সংযোগ দিয়ে গ্যাস আসতে শুরু করলে ফাতেমা ওই গ্যাস দিয়ে রান্নার কাজ চালাতেন। কিন্তু তিন-চার দিন ধরে গন্ধ ছড়ালে ফাতেমা বুঝতে পারেন লাইন দিয়ে গ্যাস লিকেজ হচ্ছে। বিষয়টি তিনি বাড়ির তত্ত্বাবধায়ককে (নাম বলতে পারেননি) জানান। পরে ওই তত্ত্বাবধায়ক মিস্ত্রি দিয়ে লাইন মেরামত না করে নিজেই সাবান লাগিয়ে গ্যাসের লিকেজ বন্ধ করে দিয়ে যান।
সাইদ বলেন, ‘আমাদের তিনটা লোক জ্যান্ত দগ্ধ হয়ে মারা গেল। কিন্তু আশুলিয়া থানা-পুলিশ এ ঘটনায় তাদের কোনো খোঁজ নিল না। এ ঘটনায় মামলাও হলো না। আমাদের প্রাণের কি কোনো মূল্য নেই?’
এ বিষয়ে বাড়ির মালিক ও তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রেজাউল হক বলেন, ঘটনাটি শুনেছেন। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।