কুয়েতে জব্দ পাপুলের ১৩৮ কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব
কুয়েতে আটক বাংলাদেশের সাংসদ কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল ও তাঁর প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির পাবলিক প্রসিকিউশন। ইতিমধ্যে পাবলিক প্রসিকিউশন কাজী শহিদ ও কুয়েতিয়া মারাফিয়া নামের প্রতিষ্ঠানের ৫০ লাখ দিনারের (১ দিনারে ২৭৫ টাকা ৭৮ পয়সা হিসেবে প্রায় ১৩৮ কোটি টাকা) হিসাব জব্দ করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন।
গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে কুয়েতের আরবি দৈনিক আল কাবাস ও ইংরেজি দৈনিক আরব টাইমস গতকাল শনিবার এই তথ্য জানায়।
কুয়েতের তদন্ত কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে দেশটির সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যক্তিকে নগদ, চেক ও নানা রকমের উপহার ঘুষ হিসেবে দিয়ে ব্যবসা পরিচালনার কথা স্বীকার করেছেন কাজী শহিদ। এসব তথ্যের ভিত্তিতে তাঁর সহযোগী মূর্তজা মামুনকে আটকের পর বেশ কয়েকটি ব্যাংকের চেক জব্দ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা, যা থেকে তদন্ত কর্মকর্তারা নিশ্চিত হয়েছেন, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে টাকা পাচার করেছেন বাংলাদেশের সাংসদ।
পরে কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তাসহ তিনজনকে আটক করা হয়। বরখাস্ত করা হয় কুয়েতের জনশক্তি কর্তৃপক্ষের এক আন্ডার সেক্রেটারিকে। আর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত এক কর্নেলসহ আরও চারজনকে।
বাংলাদেশের সাংসদ তদন্ত কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, ভিসা–বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে কুয়েতে কর্মী নেওয়ার জন্য দেশটির সরকারের একজন আমলাসহ তিনজনকে ২১ লাখ দিনার বা ৫৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন তিনি।
তদন্ত সূত্রগুলোকে উদ্ধৃত করে আল কাবাসের গতকালের প্রতিবেদনে বলা হয়, সাংসদের ৫০ লাখ দিনারের যে ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হচ্ছে, তার মধ্যে কুয়েতিয়া মারাফিয়ার মূলধন হিসেবে একটি ব্যাংকে রয়েছে ৩০ লাখ দিনার বা প্রায় ৮২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
ব্যাংক হিসাবগুলো থেকে সন্দেহজনক লেনদেনের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে নিশ্চিত হয়েছেন। এরপর থেকে ওই ব্যাংক হিসাব থেকে যাতে কোনো রকম লেনদেন না হয়, সে জন্য ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আটক সাংসদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হলে অর্থগুলো যাতে উদ্ধার করা যায়, সে জন্য পাবলিক প্রসিকিউশন এই পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে তদন্ত সূত্রগুলো জানিয়েছে।
মানব ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগ ৬ জুন কুয়েত সিটির মারাফিয়া এলাকার বাসা থেকে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সাংসদ কাজী শহিদ ইসলামকে আটক করে কুয়েতের সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট)। পরদিন তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে সিআইডি।
কাজী শহিদ বাংলাদেশের একজন সাংসদ এবং কুয়েতে তাঁর বিরুদ্ধে যে তদন্ত চলছে, তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি কুয়েত ছাড়বেন না, এমন যুক্তি দিয়ে তাঁর আইনজীবী একাধিকবার জামিনের আবেদন করেছিলেন। পাবলিক প্রসিকিউশন জামিন নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে আটক রাখা হবে।
কাজী শহিদের বিরুদ্ধে সিআইডির করা মানব পাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচার নিয়ে আগামী ৬ জুলাই শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশন।