মাত্র ১৩ দিনে মা-বাবাসহ দুই ভাইয়ের মৃত্যু

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

মাত্র ১৩টা দিন। এর মধ্যেই নেই হয়ে গেছেন বাবা–মাসহ দুই ভাই। কেউ মারা গেছেন করোনায়, আবার কেউবা কথা বলতে বলতেই হঠাৎ স্তব্দ হয়ে গেছেন। একের পর এক প্রিয়জন হারানোর ধকল সয়ে এখনো তাঁরা স্বাভাবিক হতে পারেননি।

মায়ের মৃত্যু দিয়ে এই পরিবারে শুরু হয় মৃত্যুর মিছিল। আর সবার শেষে বাবা। মাঝখানে মারা গেছেন তাঁদের দুই ছেলে। কয়েক দিনের ব্যবধানে এভাবে তছনছ হয়ে যাওয়া ওই পরিবারটি চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর পোপাদিয়া ইউনিয়নের। তবে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে থাকতেন চট্টগ্রাম নগরের ২ নম্বর গেটের মেয়র গলি এলাকায়।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে অবস্থানরত পরিবারের বড় ছেলে জয়নাল আবেদিন করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ১৫ মে সেখানকার একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। ছেলের জন্য চিন্তা করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েন মা আনজুমান আরা। সেই অসুস্থতা শেষ হয় মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। ২৩ মে মারা যান ৬৫ বছর বয়সী এই বৃদ্ধা। এর দুদিন পরে ২৫ মে এই পরিবারে আবারও কান্না। ঈদের দিনেই চলে যান ছোট ছেলে গিয়াস উদ্দিন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এর মধ্যেই আবুধাবির হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জয়নাল আবেদিনের পরিস্থিতি দিনে দিনে খারাপের দিকে যেতে থাকে। ৩ জুন খবর আসে, তিনি আর নেই। শেষবারের মতো তাঁকে দেখতেও পারেননি স্বজনেরা। কারণ, সেদেশের কবরেই ঠাঁই হয় তাঁর।

পরপর দুই ছেলে আর স্ত্রীকে হারিয়ে এফোঁড়–ওফোঁড় হয়ে যায় আহমদ হোসাইনের জীবন। এভাবে তাঁদের হারানোর শোক সইতে পারেননি সত্তরোর্ধ্ব এই প্রবীণ। ৪ জুন ভোরে তাঁদের কথা বলতে বলতেই নিস্তব্দ হয়ে যান তিনিও।

এই দুঃসময়ে কিছু মানুষের মানবিকতার পাশাপাশি অমানবিক আচরণেরও শিকার হতে হয়েছে এই পরিবারকে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার কথা জানিয়ে চশমা হিল এলাকার কবরস্থানে গিয়াস উদ্দিনের লাশ দাফন করতে বাধা দেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। পরে অবশ্য শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর ছোট ভাই বোরহানুল হাসান চৌধুরীর হস্তক্ষেপে তাঁর লাশ দাফন করেন আল মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকেরা। এই সংগঠনটি বোয়ালখালীতে নিয়ে আহমদ হোসাইনের লাশও দাফন করে।

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কথা হয় আহমদ হোসাইনের নাতি (মেয়ের ছেলে) একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মী সাদ ইবনে আহমেদের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এভাবে আপনজনেরা অল্প দিনের ব্যবধানে হারিয়ে যাবেন কল্পনাও করিনি। এমনও হয়েছে একজনকে দাফন–কাফন করে এসে দেখি আরেকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমরা এখনো স্বাভাবিক হতে পারিনি। আর কারও পরিবারে যাতে এত দুঃখ না আসে।’ সাদ জানান, তাঁর নানার তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। তাঁর মা, খালা ও আরেক মামা কারও সঙ্গে কথা বলার মতো মানসিক অবস্থায় নেই।