করোনার দৈনিক নতুন সংক্রমণে শীর্ষ দশে বাংলাদেশ
বিশ্বের ২১৫টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত নতুন রোগী শনাক্তের দিক থেকে শীর্ষে থাকা ১০টি দেশের একটি এখন বাংলাদেশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হওয়া দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দশম।
সপ্তাহওয়ারি এই হিসাবের পাশাপাশি ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী শনাক্তের ক্ষেত্রেও শীর্ষ দশে আছে বাংলাদেশ। দেশে গতকাল বৃহস্পতিবার টানা তৃতীয় দিনের মতো ২৪ ঘণ্টায় তিন হাজারের বেশি আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে। অবশ্য অন্যান্য দেশের তুলনায় করোনা (কোভিড-১৯) শনাক্তের পরীক্ষা কম হচ্ছে। পরীক্ষার সংখ্যা বাড়লে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫ হাজার ৭৭২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৩ হাজার ১৮৭ জনের দেহে সংক্রমণ পাওয়া যায়। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৮ হাজার ৫২। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ৩৭ জন। এ নিয়ে মোট মত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১ হাজার ৪৯। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৮৪৮ জন। মোট সুস্থ হলেন ১৫ হাজার ৩৩৬ জন।
গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বুলেটিনে ২৪ ঘণ্টার এসব হালনাগাদ তথ্য জানান অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা।
আগের দিনের তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে রোগী শনাক্তের পরীক্ষা কিছু কম হয়েছে। আগের দিনের চেয়ে রোগী শনাক্তও সামান্য কম হয়েছে। তবে মৃত্যুর সংখ্যা একই আছে। আগের দিন ১৫ হাজার ৯৬৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩ হাজার ১৯০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল।
দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তের কথা জানা যায়। শুরুতে পরীক্ষা ও সংক্রমণ দুটোই সীমিত ছিল। তিন মাসের মধ্যে সারা দেশে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে পরীক্ষাকেন্দ্র ও দৈনিক নমুনা পরীক্ষা অনেক বাড়লেও পরিস্থিতির তুলনায় সেটা এখনো পর্যাপ্ত নয়। আক্রান্তের সংখ্যায় বাংলাদেশ এখন শীর্ষ ২০ দেশের মধ্যে ১৯তম। আক্রান্তে শীর্ষে থাকা ২০টি দেশের মধ্যে জনসংখ্যা অনুপাতে সবচেয়ে কম পরীক্ষা হচ্ছে বাংলাদেশে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী (১০ জুন পর্যন্ত হালনাগাদ), বিশ্বের ২১৫টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে গত এক সপ্তাহে সর্বোচ্চসংখ্যক নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, এমন শীর্ষ ১০টি দেশের একটি বাংলাদেশ। এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১০ নম্বরে। এই এক সপ্তাহে বাংলাদেশে ১৯ হাজার ৭২৫ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। তালিকার শীর্ষে আছে ব্রাজিল। দেশটিতে ১ লাখ ৮৪ হাজার ১২০ জন শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া শীর্ষ দশের তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ ভারত আছে তৃতীয় এবং পাকিস্তান ষষ্ঠ স্থানে। ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী শনাক্তের হিসাবেও গত বুধবার দশম স্থানে ছিল বাংলাদেশ।
শুরু থেকে বিশ্বের সব দেশ ও অঞ্চলে সংক্রমণের হালনাগাদ তথ্য সংরক্ষণ করছে ওয়ার্ল্ডোমিটারস নামের একটি ওয়েবসাইট। তাদের তথ্য অনুযায়ী (গতকাল রাত ৯টা পর্যন্ত হালনাগাদ), গত ২৪ ঘণ্টায় যে ১০টি দেশে সবচেয়ে বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশের দেশের অবস্থান ছিল সপ্তম। আর এশিয়ায় চতুর্থ। আগের দিনও বাংলাদেশ শীর্ষ দশের তালিকায় ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে রাশিয়ায়, ৮ হাজার ৭৮৯ জন।
আর মোট আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে গতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বিশ্বে ১৯তম। আর মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে এক ধাপ এগিয়ে হয়েছে ৩১তম।
দেশে আরও ৩৭ জনের মৃত্যু
গতকালের সংবাদ বুলেটিনে অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৩০ জন পুরুষ, ৭ জন নারী। তাঁদের ২৮ জন হাসপাতালে এবং ৯ জন বাড়িতে মারা যান।
মারা যাওয়া এই ৩৭ জনের মধ্যে ১ জনের বয়স ৭০ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে, ২২ জনের বয়স ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে, ৮ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৪ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে এবং ২ জনের বয়স ছিল ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ছিল।
সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা। তিনি বলেন, বাইরে বের হলে মাস্ক পরা, কিছুক্ষণ পরপর সাবান–পানি দিয়ে হাত ধোয়া এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা—এই তিন কাজকে অভ্যাসে পরিণত করলে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যাবে।