কড়াকড়িতে কাটল পূর্ব রাজাবাজারে প্রথম দিনের লকডাউন
লকডাউনের প্রথম দিনে পূর্ব রাজাবাজারে কর্তৃপক্ষের কড়াকড়ি চোখে পড়েছে। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে আজ বুধবার থেকেই এলাকার বাসিন্দাদের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
সংক্রমণের দিক থেকে শীর্ষে থাকা ঢাকার বিভিন্ন এলাকার একটি এই পূর্ব রাজাবাজার। অঞ্চলটিকে জনস্বাস্থ্যবিদদের পরামর্শে রেড জোন বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
দুপুরের দিকে লকডাউন পরিস্থিতির খোঁজখবর নিতে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় ঢোকা ও বাইরে বেরোনোর তিনটি পথের দুটিই বাঁশের কাঠামো দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। একজন মানুষ ঢুকতে ও বেরোতে পারবেন এমন ব্যবস্থা ছিল শুধুমাত্র ফার্মগেট থেকে ঢোকার মুখে। সেখানেও স্বেচ্ছাসেবী ও চারজন পুলিশ সদস্য পাহারায় ছিলেন।
মিরপুরের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট শাখার সদস্য উপসহকারী পরিদর্শক শহীদুল ইসলাম ঢোকা-বেরোনোর বিষয়টি তদারকি করছিলেন। তিনি বলেন, শুধুমাত্র জরুরি সেবার কাজে নিয়োজিত আছেন যাঁরা তাঁদের পরিচয়পত্র দেখে ঢুকতে বা বেরোতে দেওয়া হচ্ছে।
পরিচয় দিয়ে লকডাউনে থাকা এলাকায় প্রবেশের পর দেখা যায় পথের দুই ধারে সব কটি দোকান বন্ধ। যান চলাচল করেনি। এমনকি এলাকার লোকজনও নেই।
কিছু দূর এগোতেই নাজনীন স্কুলে কোভিড-১৯ শনাক্তে বুথ বসানো হয়েছে। স্কুল সংলগ্ন একটি দোতলা ভবনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কারওয়ান বাজার অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ হোসেনকে দায়িত্বরত অবস্থায় দেখা যায়।
মাসুদ হোসেন বলেন, লকডাউনের শর্তগুলো ঠিকমতো মানা হচ্ছে কি না তর পর্যবেক্ষণ করছেন তিনি। আরও বলেন, এলাকাবাসীকে একটি নম্বর দেওয়া হয়েছে। ওই নম্বরে যোগাযোগ করে রোগ শনাক্তে নমুনা দিয়ে গেছেন অনেকে। প্রথম দিনে পরীক্ষার জন্য যোগাযোগ করেছেন ১৪ জন। এই কাজে তাঁদের সহযোগিতা দিচ্ছে ব্র্যাক। দিনে ত্রিশটি পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ করা হবে।
লকডাউন বাস্তবায়নে সিটি করপোরেশনকে সাহায্য করছে শেরে বাংলা নগর থানার পুলিশ। বুধবার এখানে দায়িত্বে ছিলেন পুলিশের ৩৫ সদস্য।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের চাহিদা মেটাতে সরকারের তরফ থেকে দিনভর ভ্যান চলেছে। স্বেচ্ছাসেবীরা জানান, অভাবী মানুষের জন্য যথেষ্ট ত্রাণ মওজুদ আছে। দু-তিন দিন বাদে ত্রাণ বিতরণ শুরু হবে।
এদিকে ঘটনাস্থলে থাকা অবস্থাতেই কয়েকজনকে দেখা গেছে স্বেচ্ছাসেবীদের অনুরোধ করে বাইরে বেরোনোর চেষ্টা করতে। একজন নারীকে বলতে শোনা যায়, অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রেখে তালা দিয়ে তিনি চলে এসেছেন। এ অবস্থায় চাবিটা পৌঁছে দেওয়া প্রয়োজন।
তবে স্বেচ্ছাসেবীরা ওই অনুরোধে সাড়া দেননি। তবে জরুরি সেবাকাজে নিয়োজিতদের কোনো বাধা দিতে দেখা যায়নি।
দুপুরের দিকে শুধুমাত্র পূর্ব রাজাবাজার মসজিদের সামনে পাঁচ-ছয়জনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। মোটের ওপর প্রায় সবাই লকডাউনের নিয়মকানুন মেনেছেন।
মো. শাওন নামে একজন স্বেচ্ছাসেবী প্রথম আলোকে বলেন, এ এলাকার চারপাশে অনেকগুলো হাসপাতাল। সকাল থেকে হাসপাতালে যারা কাজ করেন তাঁদের অনেকেই বেরিয়েছেন। কাউকেই বাধা দেওয়া হয়নি।
তবে লকডাউনের বাস্তবতা এখনো কেউ কেউ মানতে চান না। মো. কাজল মিয়া তাঁদের একজন। পূর্ব রাজাবাজারে পথের দুই পাশে ভ্রাম্যমাণ দোকানি তিনি। বহু বছর ধরে ভ্যানে শাক বিক্রি করেন।
কাজল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার ভ্যানগাড়ি দিয়া শাকসবজি মাছ-মাংস বেচতাছে, আমাগোরে কাজে লাগাইত। তাইলে তো দুই মুঠ খাবার জোগার করা সমস্যা আছিল না।’
আবার অনেকে এই ব্যবস্থাকে স্বাগত জানিয়েছেন। ইস্পাহানি চক্ষু হাসপাতালে কাজ করেন বনানী মল্লিক। দুপুরের দিকে কাজ সেরে বাসায় ফিরছিলেন মুখে টেপ দিয়ে শক্ত করে আঁটা মাস্ক ও চোখে গগলস পরে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সবাই যেন সুস্থ অবস্থায় বাঁচি সে জন্যই এই ব্যবস্থা। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।