আজ থেকে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে বৃষ্টি বাড়তে পারে
বঙ্গোপসাগর হয়ে বাংলাদেশের দিকে আসতে মৌসুমি বায়ু এবার পরপর দুইবার বাধা পেয়েছে। একবার ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও আরেকবার ঘূর্ণিঝড় নিসর্গ এসে এর চলার পথ আটকে দিয়েছে। এতে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বর্ষার বৃষ্টির মূল উৎস ওই বায়ুপ্রবাহটি একটু দেরিতে হলেও বঙ্গোপসাগর থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য দুয়ারের কাছে পৌঁছে গেছে মৌসুমি বায়ু।
তিন-চার দিন দেরিতে মৌসুমি বায়ু গতকাল রোববার কক্সবাজারের টেকনাফ ও মিয়ানমারের আরাকান উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছেছে। আগামীকাল মঙ্গলবারের মধ্যে বাংলাদেশের কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে আজ সোমবার থেকেই চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে বৃষ্টি বাড়তে পারে। দেশের অন্যান্য স্থানেও বৃষ্টি কমবেশি হতে পারে। তবে ঢাকায় বৃষ্টি বাড়তে আরও তিন-চার দিন লেগে যেতে পারে। এর মধ্যে আকাশ কালো করে দুই-এক পশলা বৃষ্টি হলেও তা বর্ষার অঝোর ধারার বর্ষণ হবে না।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক গবেষণা বলছে, এক যুগ ধরে বাংলাদেশে মৌসুমি বায়ু চলে আসার আগেই বৃষ্টি বাড়ছে। আর বর্ষার ভরা মৌসুমে কয়েক দিন অতিবৃষ্টি হলেও বাকি দিনগুলোতে বৃষ্টি কমে আসছে। এতে শহরে জলাবদ্ধতা ও গ্রামে নদীভাঙন বাড়ছে।
এ বছরও বর্ষা আসার আগে মে মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে বৃষ্টি ২০ শতাংশের বেশি হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে চলতি মাসের শুরুতে প্রকাশিত জলবায়ু পূর্বাভাসে এসব তথ্য রয়েছে। একই সঙ্গে সংস্থাটির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ বর্ষা আসার আগের মাসে যেখানে মূলত তাপমাত্রা বেশি ও কালবৈশাখী বেশি হওয়ার কথা, সেখানে মাসের দুই–তৃতীয়াংশ দিনেই বৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, মূলত ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণেই এবার মৌসুমি বায়ু একটু দেরিতে বাংলাদেশে পৌঁছাচ্ছে। আশা করি, তা চলতি সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশের বেশির ভাগ এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে। তবে দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্ষা আসার আগের মাসে ধারাবাহিকভাবে বৃষ্টি বাড়ছে। আর বর্ষার সময়ে অল্প কিছুদিন অনেক বৃষ্টি হচ্ছে ও বাকি সময় কম বৃষ্টি হচ্ছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ সোমবার দেশের সব বিভাগের দু–একটি স্থানে বৃষ্টি হতে পারে। এতে আজ দেশে সামগ্রিকভাবে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে। তবে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টি পর্যায়ক্রমে বাড়তে পারে। মাসের বাকি সময়জুড়ে বর্ষার স্বাভাবিক বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
চলতি মাসের জন্য দেওয়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, জুনে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি নিম্নচাপের সৃষ্টি হতে পারে। এতে উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টিপাতই শুধু বাড়বে। ঘূর্ণিঝড়ের কোনো আশঙ্কা নেই। এ ছাড়া টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পানির কারণে দেশের নদ-নদীগুলোর পানি দ্রুত বাড়তে পারে। এতে দেশের উত্তর–পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে বন্যা হতে পারে।
গতকাল রোববার দেশের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে বগুড়ায় ৭১ মিলিমিটার। আর রাজধানীতে বৃষ্টি হয়েছে দুই মিলিমিটার। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা সাতক্ষীরা, যশোর, ফরিদপুর ও রাজবাড়ীর ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি আজও অব্যাহত থাকতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।