করোনাকালে ১৫ হাজার ২১৭ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন
>করোনার সংক্রমণে বাংলাদেশ ছেড়েছেন ১১ হাজার ৮৯২ বিদেশি
ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীনসহ ২০টি দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কয়েকটি সদস্য দেশ থেকে গত ৪ মাসে ৬ হাজার ২৪১ জন বাংলাদেশিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশে ফিরিয়ে এনেছে। একই সময় বাংলাদেশ থেকে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীনসহ ২১টি দেশ ও ইইউর কয়েকটি সদস্য দেশের ১১ হাজার ৮৯২ জন নাগরিক তাঁদের দেশে ফিরে গেছেন। এ ছাড়া গত দেড় মাসে ৮ হাজার ৯৭৬ জন অভিবাসী দেশে ফিরেছেন। এ পর্যন্ত ১৫ হাজার ২১৭ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন
গতকাল সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করোনাবিষয়ক সেল থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বিস্তার ঘটার আগেই চিকিৎসা, বেড়ানো, পড়াশোনা ও পেশাগত নানা কাজে গিয়েছিলেন কয়েক হাজার বাংলাদেশি। লকডাউন, আকাশপথে চলাচল বন্ধসহ নানা কারণে প্রতিবেশী ভারতের পাশাপাশি সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ আর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ পশ্চিমা অনেক দেশে এসব বাংলাদেশি আটকা পড়েন।
করোনার সংক্রমণের বিস্তার ঘটার পর থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় আকাশ ও সড়কপথে বাংলাদেশের নাগরিকদের ফেরানো এবং বিদেশিদের বাংলাদেশ ছাড়ার বিষয়টিতে সমন্বয় করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করোনাবিষয়ক সেল।
আটকে পড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের ফেরানো এবং বিদেশি নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সমন্বয়ের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অভিবাসী কর্মীদের ফেরানোর কাজটি করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
১৫ এপ্রিল থেকে ৩০ মে পর্যন্ত দেড় মাসে কুয়েত, মালয়েশিয়া, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর ও সৌদি আরব থেকে ৮ হাজার ৯৭৬ জন অভিবাসী দেশে ফিরেছেন। এঁদের মধ্যে কুয়েত থেকে ৩ হাজার ৪৮৯ জন, মালয়েশিয়া থেকে ১ হাজার ৭৯২ জন, ওমান থেকে ১ হাজার ৪০৮ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ১ হাজার ৩৯৪ জন, বাহরাইন থেকে ৩১১ জন, সৌদি আরব থেকে ৩০৯ জন এবং সিঙ্গাপুর থেকে ২৭৩ জন দেশে ফিরেছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এই প্রতিবেদককে জানান, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অভিবাসীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সাধারণ ক্ষমার আওতায় দেশে ফিরেছেন। বিশেষ করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বেশ কয়েকটি দেশ অনিয়মিত অভিবাসীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। অতীতে অনিয়মিতভাবে বিভিন্ন পেশায় থাকলেও করোনার কারণে অর্থনৈতিক অস্থিরতায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কাজ পাওয়া দুরূহ হবে। এ জন্য কয়েক হাজার বাংলাদেশি ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাই সাধারণ ক্ষমার সুযোগ কাজে লাগিয়ে অন্য দেশের মতো কোনো রকম জরিমানা না দিয়েই বিনা খরচে দেশে ফেরার সুযোগ পেয়েছেন বাংলাদেশের অভিবাসীরা। করোনার সংক্রমণ রোধে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো তাদের কারাবন্দীদের মুক্তি দিয়েছে। এতেও বেশ কিছু বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন।
করোনার কারণে আটকে পড়া এবং অভিবাসী মিলিয়ে এ পর্যন্ত ১৫ হাজার ২১৭ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। দেশে ফিরে তাঁরা প্রাতিষ্ঠানিক বা আবাসিক কোয়ারেন্টিনে (সঙ্গনিরোধ) থাকছেন কি না বা করোনায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন কি না, এ নিয়ে লোকজনের প্রশ্ন রয়েছে।
ফিরে আসা বাংলাদেশের লোকজন বাড়ি ফিরে যাওয়ার পর কী হচ্ছে, এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও করোনা সেলের প্রধান ডা. খলিলুর রহমান গতকাল তাঁর দপ্তরে প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশ থেকে যেসব লোকজন দেশে ফিরে আসেন, দূতাবাসের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে পাঠায়। ওই তালিকা দেখে লোকজনকে বিমানবন্দরে অবতরণ করতে দেওয়া হয়। যেসব লোকজন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত নন, সনদ জমা দেন, তাঁদের সরাসরি গন্তব্যে যেতে ছেড়ে দেওয়া হয়। তা ছাড়া সবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর একটি নির্ধারিত আবেদনপত্র পূরণ করে গন্তব্যে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। যেসব অভিবাসীর বাড়িতে ১৪ দিনের সঙ্গনিরোধ বাধ্যতামূলক, তাঁদের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জানান, দেশের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে লোকজন বাড়িতে সঙ্গনিরোধ থাকছেন কি না, তা দেখভালের দায়িত্ব পুলিশের। এ ছাড়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে যাঁরা প্রাতিষ্ঠানিক, অর্থাৎ, হাসপাতালে সঙ্গনিরোধে যাবেন, সেটি সমন্বয়ের কাজটি করছে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বিদেশ থেকে ফেরা লোকজনের মধ্যে কোন জেলার অধিবাসী কতজন এবং তাঁরা বাড়িতে নাকি অন্য কোথাও গেছেন, এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে কোনো পরিসংখ্যান জানা যায়নি।