চট্টগ্রামে ঈদের আগে বন্ধ থাকছে প্রায় সব মার্কেট

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম নগরের তামাকুমুণ্ডি লেন, রিয়াজউদ্দিন বাজার, টেরিবাজার ও পৌর জহুর হকার্স মার্কেট ঈদের আগে না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আজ শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের মতবিনিময় সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপরও যদি দোকানপাট খোলা রাখা হয়, সে জন্য ছয়টি নির্দেশনা দিয়েছে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ৷


পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ব্যবসা-বাণিজ্য, দোকানপাট ও শপিং মলগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও বিস্তার প্রতিরোধে করণীয় নিয়ে নগরের দামপাড়া পুলিশ লাইনসে ব্যবসায়ী সমিতিগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে পুলিশ৷ এতে পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান সভাপতিত্ব করেন। নগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতির নেতা উপস্থিত ছিলেন।


এর আগে গত শুক্রবার নগরের ১১টি অভিজাত বিপণিকেন্দ্র চালু না করার ঘোষণা দেওয়া হয়। অর্থাৎ, এবারের ঈদ উপলক্ষে চট্টগ্রামের প্রায় সব ছোট-বড় বিপণিকেন্দ্র বন্ধ থাকছে।

এসব বিপণিকেন্দ্রের বাইরে যদি নগরের কোনো দোকান বা মার্কেট খোলা রাখা হয়, তাহলে তাদের শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। অমান্য করলে তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে। গতকালের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

সরকার রমজান ও ঈদের বাজার উপলক্ষে ১০ মে থেকে দেশের শপিং মলগুলো বিকেল ৪টা পর্যন্ত সীমিত আকারে চালুর ঘোষণা দিয়েছে। তবে এ জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্ত দেওয়া হয়। করোনার কারণে বর্তমানে শপিং মলগুলো বন্ধ রয়েছে।


নগর পুলিশের ৬ নির্দেশনা:

চট্টগ্রাম নগর পুলিশ দোকানপাট ও শপিং মল খোলার ব্যাপারে ছয়টি নির্দেশনা দিয়েছে। এগুলো হচ্ছে, সরকার ঘোষিত নির্ধারিত সময় সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দোকানপাট ও শপিং মল খোলা রাখা যাবে। এরপর বন্ধ করতে হবে। শপিং মল বা বিপণিকেন্দ্রের দুই কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী ক্রেতারা সংশ্লিষ্ট শপিং মল বা মার্কেটে কেনাকাটা করতে পারবেন।

এ ছাড়া বসবাসের এলাকা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ক্রেতা সাধারণের নিজ নিজ পরিচয়পত্র (যেম: ব্যক্তিগত আইড কার্ড, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, বিদ্যুৎ–গ্যাস–পানির বিলের মূল কপি ইত্যাদি) সঙ্গে রাখতে হবে এবং পরীক্ষা করে শপিং মলে প্রবেশ করতে দেওয়া।
আর বয়স্ক, শিশু ও অসুস্থদের শপিং মলে গমনাগমনে নিরুৎসাহিত করা। শপিং মলের প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ আলাদা আলাদা নির্ধারণ করা। শপিং মলে আসা যানবাহনগুলোকে অবশ্যই জীবাণুমুক্তকরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
সভায় নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার, নিউমার্কেট, তামাকুমুণ্ডি লেন, পৌর জহুর হকার্স মার্কেটের দোকান মালিক, ব্যবসায়ী সমিতিসহ অধিকাংশ ব্যবসায়ী সমিতি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও বিস্তার প্রতিরোধের লক্ষ্যে ঈদে দোকানপাট, মার্কেট ও শপিং কমপ্লেক্স বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন।
নগর পুলিশের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চট্টগ্রাম নগরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ জন্য অধিকাংশ ব্যবসায়ী সমিতি মালিক, শ্রমিক এবং নগরবাসীর স্বাস্থ্যের বিষয়টি মাথায় রেখে রমজান মাসে দোকানপাট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সভায় পুলিশ কমিশনার বলেন, অন্যান্য যাঁরা দোকানপাট, মার্কেট, শপিং কমপ্লেক্স খোলা রাখার চিন্তাভাবনা করছেন, তাঁদের অবশ্যই করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও বিস্তার রোধে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখার নির্দেশনা অমান্য করলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দায়ে তাৎক্ষণিকভাবে ওই দোকান, মার্কেট বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ব্যবসায়ী নেতারা বিপণিকেন্দ্র চালু না রাখার প্রসঙ্গে বলছেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে যেসব স্বাস্থ্যবিধি দেওয়া হয়েছে, তা মানা অনেক কঠিন। আর দোকানমালিক ও কর্মচারীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে আসবেন। ক্রেতারাও আসবেন। তাঁদের কেউ যদি করোনায় আক্রান্ত হন, তাহলে অন্যরাও ঝুঁকিতে পড়বেন। আর স্বল্প সময়ের জন্য মার্কেট চালু করা লাভজনক হবে না। এসব চিন্তা করে এবার বিপণিকেন্দ্র বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
নগরের পৌর জহুর হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল আমিন বলেন, তাঁদের মার্কেটের অধিকাংশ ব্যবসায়ী ও কর্মচারী চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার। কিন্তু সেখানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা কঠিন। তাই ঈদে মার্কেট খুলবেন না।

তামাকুমুণ্ডি লেন বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহমেদ কবির বলেন, স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে ব্যবসা করা সম্ভব না। আবার নগর পুলিশও কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। তা বাস্তবায়ন করতে গেলে ব্যবসা হবে না। তাই ৩১ মে পর্যন্ত মার্কেট বন্ধ থাকবে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি ছালামত আলী বলেন, জনস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে কোনো বিপণিকেন্দ্র ও শপিং মল না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।