নাটোরে ফিলিং স্টেশনের জন্য সড়কের ৪৫টি আমগাছ কাটা চলছে

নাটোর-পাবনা মহাসড়কের পাশের আম গাছ কাটছেন শ্রমিকেরা।ছবিটি গতকাল বুধবার দুপুরে তোলা। ছবি: মুক্তার হোসেন
নাটোর-পাবনা মহাসড়কের পাশের আম গাছ কাটছেন শ্রমিকেরা।ছবিটি গতকাল বুধবার দুপুরে তোলা। ছবি: মুক্তার হোসেন

ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের সুবিধার জন্য নাটোরে মহাসড়কের দুই পাশের ৪৫টি ফলবান আম গাছ কাটা চলছে। সদর উপজেলার গাজির বিল এলাকায় নাটোর-পাবনা মহাসড়কে ফলবান আম গাছগুলো কেটে ফেলার উদ্দেশ্যে সস্তায় বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। একেকটি গাছের দাম মাত্র ২১৩ টাকা। 

গতকাল বুধবার ২০টি গাছ কাটা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বাকিগুলো কাটা হচ্ছে।


জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) জায়গায় গাছগুলো রোপন করেছিল বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। তারাই প্রতিটি গাছ ২১৩ টাকা দরে স্থানীয় এক কাঠ ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেছে। তরতাজা এসব গাছ কেটে ফেলার নিন্দা জানিয়েছেন নাটোরের সচেতন নাগরিকেরা।


বিএমডিএ নাটোর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সওজের সঙ্গে যৌথ চুক্তিতে প্রায় ১০ বছর আগে নাটোর-পাবনা মহাসড়কের দুই পাশে আমগাছ লাগানো হয়েছিল।কয়েক বছর ধরে এসব গাছে আম ধরে। এ অবস্থায় সওজ কর্তৃপক্ষ সদর উপজেলার গাজিরবিল এলাকায় ব্যক্তি মালিকানাধীন নাটোর এলপিজি কনভার্সন ওয়ার্কসপ নামে একটি ফিলিং স্টেশন প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেয়। ওই প্রতিষ্ঠানে চলাচলের সুবিধার জন্য সামনে থাকা আমগাছগুলি কেটে নেওয়ার জন্য সওজ বিএমডিএ কে চিঠি দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সেখানকার ৪৫ টি ফলবান আমগাছ নিলামে বিক্রির দরপত্র আহ্বান করা হয়। স্থানীয় এক কাঠ ব্যবসায়ী ৩ মে নয় হাজার ৬০০ টাকা মূল্য পরিশোধ করে গাছগুলো কিনে নেন। গতকাল সকাল থেকে তিনি কাঁচা আম পেড়ে নিয়ে গাছগুলো কাটতে শুরু করেন। বিকেল অবধি তিনি অন্তত ২০টি গাছ কাটা শেষ করেন।


খবর পেয়ে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা সেখানে গেলে গাছের ওই ক্রেতা তাঁদের সঙ্গে বাকবিতন্ডা শুরু করেন। তিনি সাংবাদিকদের এ ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে অপারগতা জানান।


ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) নাটোরের সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, নাটোর-পাবনা মহাসড়কের দুই পাশে লাগানো আম গাছে গত কয়েক বছর ধরে আম ধরছে। এছাড়া সবুজ গাছগুলোতে পাখিরা আশ্রয় নেয়। পথচারীরা বিশ্রাম নেন। গাছগুলো সড়কের শোভাবর্ধনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে বিনা প্রয়োজনে এতোগুলো ফলবান গাছ কাটা উচিত হয়নি। পানির দরে এতোগুলো গাছ বিক্রি করাটা অনিয়মের পর্যায়ে পড়ে।


ইঙ্গিত থিয়েটার নাটোরের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী সুখময় রাখ বলেন, তুচ্ছ কারণে এতোগুলো গাছ কাটার দরকার ছিল না। একটি প্রতিষ্ঠানে ঢোকা ও বের হওয়ার জন্য সর্বোচ্চ ১০টি গাছ কাটা যেত। পরিবেশের এতো বড় ক্ষতি করার জন্য ঘটনাটি প্রশাসনের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।


নাটোরের প্রবীণ কাঠ ব্যবসায়ী গ্যাদা মিয়া জানান, বর্তমানে প্রতি মণ আমগাছের খড়ি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা করে। এ হিসেবে গাছগুলো খুব কম দামে বিক্রি করা হয়েছে।


গাছের ক্রেতা আমীর আলী দাবি করেন, তিনি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই গাছ কিনেছেন। সর্বোচ্চ দরদাতা হওয়ায় গাছের মূল্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা অমূলক বলে তিনি মনে করেন। এছাড়া ব্যবসায়ী হিসাবে তিনি তো লাভের জন্যই গাছ কিনেছেন!


বিএমডিএ নাটোর জোনের সহকারি প্রকৌশলী আহসানুল করিম মুঠোফোনে গাছ বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন,'সওজ বহু আগেই গাছগুলো অপসারণের জন্য চিঠি দিয়েছিল। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ গাছ বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়। বন বিভাগকে দিয়ে গাছের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। পরে নিলাম বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দরপত্র আহবান করা হয়। মূল্য পরিশোধের পর সর্বোচ্চ দরদাতার কাছে গাছগুলো বিক্রি করা হয়েছে।'
এতো গাছ বিক্রির প্রয়োজন ছিল কি না জানতে চাইলে আহসানুল করিম বলেন,'প্রকৃতপক্ষে ৪৫টি গাছ কাটা পড়বে না। আমরা সতর্কতা হিসেবে প্রয়োজনের চেয়ে কিছু বেশি গাছ নিলামে দিয়েছি।'
৪৫টি গাছের টাকা নেওয়ার পর ক্রেতাকে গাছ কাটতে নিষেধ করার সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে বলেন,'আইনত নেই। তবে তাঁকে বলা আছে।'


এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো.শাহরিয়াজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'খুবই কম দামে গাছ বিক্রির কথা শুনেছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'