সামাজিক দূরত্ব মেনে অবসর ভাতা বিতরণ
ঈদগাহ মাঠে বিশাল রঙিন শামিয়ানা। নিচে নির্ধারিত দূরত্বে রাখা সারি সারি চেয়ার। প্রতিটি চেয়ারে বসে আছেন ষাটোর্ধ্ব নারী-পুরুষ। তাঁরা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী। সামনে থেকে মাইকে ডাক পড়লে একজন একজন করে উঠে গিয়ে নিজেদের অবসর ভাতার টাকা গ্রহণ করছেন।
চলমান পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব কার্যকরে এবং লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার কষ্ট লাঘবে সোনালী ব্যাংক নাটোর প্রধান শাখা আজ রোববার থেকে শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে এই আয়োজন করেছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণে অধিক ঝুঁকিতে থাকা এসব ব্যক্তি ব্যাংকের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
সোনালী ব্যাংক নাটোর প্রধান শাখা সূত্র জানায়, প্রতি মাসে অন্তত দেড় হাজার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী এই শাখা থেকে তাঁদের পেনশনের মাসিক টাকা তুলতে আসেন। তাঁদের প্রত্যেকের বয়স ৬০ বছরের ওপরে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাঁরা করোনাসংক্রমণে অধিক ঝুঁকিতে আছেন। এ ছাড়া তাঁদের ব্যাংকের কাউন্টারে লাইনে দাঁড় করিয়ে টাকা দিতে হলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাও অসম্ভব। কারণ, ব্যাংক চত্বরে এত জায়গা নেই। তাই তারা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে ব্যাংক থেকে কিছুটা দূরে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে বিশাল শামিয়ানা টানিয়েছে। সেখানে নির্দিষ্ট দূরত্বে পাঁচ শতাধিক চেয়ার রাখা হয়েছে। পেনশনভোগীরা সেখানে এসে বসছেন। শামিয়ানার সামনে ব্যাংকের ছয়জন কর্মী মাইকে ডেকে ডেকে তাৎক্ষণিক টাকা হাতে তুলে দিচ্ছেন। এভাবে তিন দিন ধরে পেনশন দেওয়া হবে। প্রথম দিন অন্তত ৫০০ অবসরভোগী তাঁদের পেনশন নিয়েছেন। এভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মধ্য দিয়ে করোনা প্রতিরোধ করার পাশাপাশি বয়স্ক ব্যক্তিরা স্বাচ্ছন্দ্যে টাকা নিতে পারছেন।
দুপুর ১২টার দিকে ঈদগাহ মাঠে গিয়ে দেখা যায়, অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মচারীরা শামিয়ানার ছায়ায় চেয়ারে বসে আছেন। ব্যাংকের কর্মীরা হ্যান্ডমাইকে ডেকে ডেকে পেনশনের টাকা তাঁদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। সেখানে অপেক্ষমাণ জেলা জজ আদালতের অবসরপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা শরিফ উদ্দিন বলেন, এত দিন রোদ–বৃষ্টি মাথায় নিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে পেনশনের টাকা নিয়েছেন। এখন করোনাভাইরাসের বদৌলতে তাঁরা শামিয়ানায় বসে আরামে–আয়েশে টাকা তুলতে পারছেন। এ জন্য তিনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। এই ব্যবস্থা অব্যাহত রাখারও অনুরোধ করেন তিনি।
ব্যাংকের দায়িত্বরত সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মো. ফারুক হাসান বলেন, ‘পেনশনভোগীরা একদিকে যেমন সমাজের সিনিয়র সিটিজেন, তেমনি করোনা সংক্রমণে অধিক ঝুঁকির মধ্যে আছেন। তাই আমরা পরামর্শ করে নিজেরাই তাঁদের জন্য এই ক্ষুদ্র সুবিধার ব্যবস্থা করেছি। এটা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করব।’