পণ্যবাহী যানে যাত্রী বহন বন্ধে এবার কঠোর বিআরটিএ
সরকার ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। গণপরিবহনের চলাচলও বন্ধ আছে। এর মধ্যে পোশাক কারখানা বন্ধ-চালু নিয়ে এক ধরনের ইঁদুর-বিড়াল খেলা হয়েছে। এর ফলে বিপুল পোশাক শ্রমিক ঢাকায় আসা-যাওয়ার মধ্যে আছেন। আর খেটে খাওয়া মানুষের এই যাতায়াতের প্রধান বাহন হয়ে দাঁড়িয়েছে পণ্যবাহী যানবাহন। পোশাক কারখানার মালিক, সরকার ও প্রশাসনের মধ্যে সৃষ্ট এই সমন্বয়হীনতাকে অনেকেই করোনাভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকির কারণ হিসেবে দেখছেন। অবশেষে পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন না করার জন্য কড়া নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
অবশ্য আজ দুপুরে পুলিশও ঢাকায় প্রবেশ ও বের হওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। পুলিশ সদর দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জনসাধারণের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখার জন্য জরুরি প্রয়োজন ছাড়া একা কিংবা দলবদ্ধভাবে বাইরে ঘোরাফেরা করতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। পরবর্তী সরকারি নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জনসাধারণকে ঢাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। এমনকি তাদের ঢাকা ছেড়ে যেতেও দেওয়া হবে না।
পণ্যবাহী যানবাহন পরিচালনায় যুক্ত মালিক-শ্রমিকেরা বলছেন, পুলিশ, জেলা প্রশাসন ও বিআরটিএ তৎপর হলে সামনে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে না।
দেশে করোনা মহামারি ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে সব অফিস-আদালত ছুটি ঘোষণা করা হয়। তবে পোশাক কারখানার বিষয়ে কোনো স্পষ্ট সিদ্ধান্ত দেয়নি সরকার। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ অধিকাংশ কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেয়। কিন্তু গণপরিবহন না থাকায় অনেক পোশাক শ্রমিক বাড়ি ফেরেন ট্রাক, পিকআপ ও কাভার্ডভ্যানে করে। গত শনি ও রোববার কিছু কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত জানানো হয় শ্রমিকদের। এই খবরে শুক্রবার থেকে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকার পথে রওনা করেন শ্রমিকেরা। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বেশির ভাগই হেঁটে, পণ্যবাহী যান যা পেয়েছেন তাতেই চড়ে বসেন। গতকাল শনিবার রাতে পুনরায় পোশাক কারখানা বন্ধের ঘোষণা আসে। এর ফলে যে সব শ্রমিক ঢাকায় এসেছিলেন, তাদের অনেকেই আবার ফিরে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রেও প্রধান ভরসা পণ্যবাহী যান।
পণ্য পরিবহনে যুক্ত মালিক ও শ্রমিক সংগঠন সূত্র বলছে, স্বাভাবিক সময়ে দেশে সাড়ে ৩ লাখ ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করে। সরকার লকডাউন ঘোষণার সময় জরুরি পণ্যবাহী যান এর আওতামুক্ত রাখে। ২৬ মার্চের পরবর্তী দুই-তিন দিন মাত্র ১০ শতাংশ পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করেছে। এর পেছনে মূল কারণ ছিল শ্রমিকের স্বল্পতা, মহাসড়কে খাবারের দোকান বন্ধ থাকা এবং কিছুটা আতঙ্ক। পরে পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করে কিছু খাবারের দোকান খোলা রাখার ব্যবস্থা করে। এতে পণ্যবাহী পরিবহনের চলাচল বেড়েছে। এ সুযোগে পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহনও বেড়ে যায়।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক রুস্তম আলী খান প্রথম আলোকে বলেন, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন একেবারেই নিষিদ্ধ। কিন্তু পোশাক কারখানা চালু-ছুটি নিয়ে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বের ফলে যাত্রী পরিবহন কিছুটা হয়েছে। পোশাক শ্রমিকদের নিদারুণ দুর্ভোগে আসলে এটা ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না। তবে এখন প্রশাসন তৎপর হলে আর কেউ পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন করবে না।
আজ বিআরটিএর পক্ষ থেকে পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহনের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী পরিবহন বন্ধ রাখার সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। এরপরও দেখা যাচ্ছে, কোনো কোনো পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। যা দণ্ডনীয় অপরাধ। এ অবস্থায় জেলা প্রশাসন ও পুলিশকে এই বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
বিআরটিএর চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ইউসুফ আলী মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন বন্ধে পুলিশ সদর দপ্তর এবং প্রত্যেক জেলা প্রশাসকের দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখন আর চলতে পারবে না।