কেন কান ধরে এই ওঠবস, সদুত্তর নেই এসির
প্রশাসনের একজন সহকারী কমিশনার বয়স্ক দুই ব্যক্তিকে কান ধরে ওঠবস করাচ্ছেন। পেছনে দুই পুলিশ সদস্য ও আরও একাধিক ব্যক্তি। তিনি নিজেই আবার ওই ঘটনার ছবি তুলছেন। এমন এক ছবি গতকাল শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে আলোড়ন তোলে। প্রশাসনের দায়িত্বশীল সূত্র বলেছে, এমন কাণ্ড ঘটানোর বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি ওই কর্মকর্তা।
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার চিনেটোলা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। যে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এই ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাঁর নাম সাইয়েমা হাসান। জানা গেছে, বিসিএস ৩৪তম ব্যাচের এই কর্মকর্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ থেকে পাস করেছেন। কিছুদিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন।
বিসিএস পরীক্ষায় চতুর্থ হয়েছিলেন সাইয়েমা। বাড়ি রাজশাহীতে। করোনাভাইরাস রোধে চলাচল সীমিত রাখার সরকারি আদেশ পালন করতে গিয়ে গতকাল বিকেলে তিনি দুই বৃদ্ধ ভ্যানচালককে কান ধরে ওঠবস করান। স্থিরচিত্র ছাড়াও তাঁর অভিযানের আরেকটি ভিডিও পাওয়া গেছে। ওই ভিডিওতেও তাঁকে কাঁচাবাজারে ঢুকে এক ব্যক্তিকে কান ধরে ওঠবস করাতে দেখা যায়।
যশোরের জেলা প্রশাসক মো. শফিউল আরিফ প্রথম আলোকে বলেন, যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বলা হয়েছিল, মানুষ যেন ঘরে থাকে, সে ব্যাপারে তাঁরা যেন উদ্বুদ্ধ করেন। তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে খোঁজ নিতে সাইয়েমা হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে প্রথম আলোকে যশোর প্রশাসনের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, সাইয়েমা হাসান কেন এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রাতেই এ বিষয়ে তাঁর কাছে জানতে চান। জবাবে তিনি একেকবার একেক কথা বলেছেন। তিনি বলেন, তাঁকে দেখে ওই বৃদ্ধ দুই ব্যক্তি ভয়ে কান ধরে ফেলেন। আবার বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে এত মানুষকে বাজারে দেখে তিনি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিলেন। তিনি ছবি তুলছিলেন কেন, এরও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক ও অধীনস্থ কর্মকর্তারা মধ্যরাতে একজন সাংবাদিকদের বেধড়ক পেটানো ও জেলে ভরে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এ নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় হয়। পরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে প্রশাসন। দুই সপ্তাহের মাথায় আবারও প্রশাসনের একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিগ্রহের অভিযোগ উঠল।
করোনাভাইরাস রোধে চলাচল সীমিত রাখার সরকারি আদেশ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রাস্তায় কাউকে পেলে কান ধরে ওঠবস করানো, লাঠিপেটা করা, মাটিতে গড়াতে বাধ্য করার মতো বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে।
এ প্রেক্ষাপটে পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. জাবেদ পাটোয়ারী দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশ সদস্যদের সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিনয়ী, সহিষ্ণু ও পেশাদার আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।