সগিরা মোর্শেদ হত্যায় মারুফ জড়িত নন, দাবি পরিবারের

সংবাদ সম্মেলনে মারুফ রেজার স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরা। ছবি: আসাদুজ্জামান
সংবাদ সম্মেলনে মারুফ রেজার স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরা। ছবি: আসাদুজ্জামান

প্রায় তিন দশক আগে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে সংগঠিত সগিরা মোর্শেদ সালাম খুনে আসামি মারুফ রেজা জড়িত ছিলেন না বলে দাবি করেছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা।

মারুফ রেজার স্ত্রী নুসরাত জেরীন রেজা দাবি করেছেন, তাঁর স্বামী সগিরা মোর্শেদ হত্যাকাণ্ডে কোনোভাবে জড়িত ছিলেন না। তাঁর স্বামী নিরপরাধ।

আজ শনিবার ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

লিখিত বক্তব্যে নুসরাত জেরীন বলেন, তাঁর স্বামী মারুফ রেজার নামে কোনো থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি কিংবা মামলা নেই। সগিরা মোর্শেদ মোর্শেদ হত্যা মামলার এজাহারে মারুফ রেজার নাম ছিল না। সগিরা মোর্শেদ হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার তাঁরাও চান। কিন্তু কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে যেন এই মামলায় জড়ানো না হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত আসামি মারুফ রেজার দুই মেয়ে মেহজাবিন রেজা ও মুসকান রেজা বলেন, তাঁদের বাবা সগিরা হত্যাকাণ্ডে জড়িত নন।

গত ১৬ জানুয়ারি সগিরা মোর্শেদ সালাম হত্যা মামলায় আসামি মারুফ রেজাসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। অভিযোগপত্রে বলা হয়, পারিবারিক তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।
চার আসামি হলেন নিহত সগিরার ভাশুর চিকিৎসক হাসান আলী চৌধুরী (৭০), তাঁর স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা শাহিন (৬৪), শাহিনের ভাই আনাছ মাহমুদ রেজওয়ান (৫৯) ও মারুফ রেজা (৫৯)।
মামল

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই সগিরা মোর্শেদ ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে মেয়েকে আনতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তের কবলে পড়েন। একপর্যায়ে দৌড় দিলে তাঁকে গুলি করা হয়। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে সগিরা মারা যান। সেদিনই রমনা থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন তাঁর স্বামী সালাম চৌধুরী। প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক জড়িত দুজনের কথা বললেও মিন্টু ওরফে মন্টু নামের একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি মন্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। নেওয়া হয় সাতজনের সাক্ষ্য। বাদীপক্ষের সাক্ষ্যে আসামি মন্টু ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদুল হাসানের নিকটাত্মীয় মারুফ রেজার নাম আসে। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯১ সালের ২৩ মে বিচারিক আদালত অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে মারুফ রেজা হাইকোর্টে আবেদন করেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯১ সালের ২ জুলাই হাইকোর্ট রুল দিয়ে অধিকতর তদন্তের আদেশ স্থগিত করেন। পরের বছরের ২৭ আগস্ট অপর এক আদেশে হাইকোর্ট ওই রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ান। এতে থমকে যায় মামলার কার্যক্রম। বিষয়টি নজরে এলে ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের জন্য উদ্যোগ নেয় রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি নিয়ে গত বছরের ২৬ জুন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ মামলার অধিকতর তদন্ত আদেশে ইতিপূর্বে দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেন। একই সঙ্গে ৬০ দিনের মধ্যে ওই মামলার অধিকতর তদন্ত শেষ করতে পিবিআইকে নির্দেশ দেন।

পিবিআইয়ের সংবাদ সম্মেলনে জানায়, পারিবারিক বিরোধের জের ধরে সগিরা মোর্শেদার ভাশুর, ভাশুরের স্ত্রী ও শ্যালক মিলে তাঁকে (সগিরা) হত্যার পরিকল্পনা করেন। তাঁরা ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে তাঁকে হত্যা করান। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এটি কোনো ছিনতাইয়ের ঘটনা ছিল না।