চীন ১০ হাজার কিট পাঠাচ্ছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশে যাঁরা করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শিকার হয়েছেন, তাঁরা বিদেশফেরত লোকজনের সান্নিধ্যে এসে এই দুর্ঘটনায় পড়েছেন। তাই নাগরিকদের সুরক্ষায় ৩১ মার্চ পর্যন্ত ১০ দেশ থেকে বাংলাদেশে যাত্রীবাহী ফ্লাইট আসা বন্ধ থাকবে। আর করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য চীন পাঠাচ্ছে ১০ হাজার টেস্টিং কিট ও ১০ হাজার প্রটেক্ট ইকুইপমেন্ট।
আজ শনিবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেখেছি, করোনাভাইরাসটা মোটামুটি সংক্রমিত হয়েছে বিদেশফেরত লোকজনের মাধ্যমে। যে ২০ জন সংক্রমণের শিকার হয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকেই বিদেশ থাকা আসা লোকজনের সান্নিধ্যে এসেছেন বলে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমাদের দেশের নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে আমরা কাতার, বাহরাইন, কুয়েত, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর ও ভারত এ ১০টি গন্তব্য থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ আসা রহিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে এ সময়ে যুক্তরাজ্য, চীন, থাইল্যান্ড ও হংকং—এ চার রুট চালু রেখেছি। বিশেষ প্রয়োজন হলে লোকজন ওই রুটগুলো ব্যবহার করতে পারবেন।’
১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘সরকারের কঠোর সিদ্ধান্ত, প্রবাস থেকে যেই–ই আসুক না কেন, তাকে অবশ্যই ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে যেতে হবে। সেটা বাড়িতে হোক কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক। নির্ঘাত তাকে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। কেউ অমান্য করলে স্থানীয় প্রশাসনকে জানাবেন। স্থানীয় প্রশাসন বিহিত ব্যবস্থা নেবে। যারা বিদেশ থেকে ফিরবে, তাদের প্রত্যেকের হাতে একটি অমোচনীয় কালি দিয়ে দাগ দেওয়া হচ্ছে, যাতে সহজে চিহ্নিত করা যায়।’
এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘যাঁরা বিদেশ থেকে ফিরবেন, তাঁদের আত্মীয়স্বজনের কাছে আমাদের আবেদন, আপনারাও যিনি আসবেন তাঁর প্রতি সজাগ থাকবেন। কারণ, এ ভাইরাসটা কার মধ্যে আছে, তা আমরা জানি না। ১৪ দিন পর্যন্ত ওই ভাইরাস সম্পর্কে আমরা বলতে পারি না। তাই এই সময়টা যাতে সবাই যথাযথভাবে মেনে চলেন।’
প্রবাসে থাকা বাংলাদেশের নাগরিকদের সফর পিছিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেক মিশনপ্রধানকে জানিয়েছি আমরা কী কী ব্যবস্থা নিয়েছি। তাঁরা যেন তাঁদের সংশ্লিষ্ট মিশনগুলোর মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশে আসাটা পিছিয়ে দিতে পারেন। কারণ, সারা দুনিয়ায় সংকট চলছে। তাঁরা যেসব দেশে আছেন, সেগুলোর মধ্যে অনেক দেশেই লকডাউন করে ফেলেছে। কাজেই তাঁরা যেন দেশে আসাটা পিছিয়ে দেন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এরই মধ্যে বাংলাদেশের আলাপ হয়েছে যে যদি কোনো দেশে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, কিংবা অন্য কোনো সমস্যা তৈরি হয়, তাতে সে দেশে ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হবে।
করোনাভাইরাসের কিটসের সংকট দূর হওয়ার বিষয়ে এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘পরীক্ষার জন্য কিট নেই, সুরক্ষার যন্ত্রপাতি নেই. এসব বলা হচ্ছে। আমরা এসব তৈরি রেখেছি। চীনকে এ বিষয়ে বলেছিলাম। তারা এরই মধ্যে ১০ হাজার টেস্টিং কিট ও ১০ হাজার প্রটেক্টিং ইকুইপমেন্ট তৈরি রেখেছে। যেকোনো সময়ে ভাড়া করা উড়োজাহাজে এসব চলে আসবে। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও আনার চেষ্টা করছে। প্রয়োজন হলে আমরা সেগুলোও আনার চেষ্টা করব।’
যুক্তরাজ্য, চীনসহ চারটি আন্তর্জাতিক রুট খোলা রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তো পুরোপুরি লকডাউন করতে পারি না। বাধ্য হয়ে কয়েকটি খালি রেখেছি।’