তনু হত্যা মামলা: ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও তদন্তে অগ্রগতি নেই
কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের চার বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ ২০ মার্চ। কিন্তু দীর্ঘ এ সময়েও এই ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই। এ অবস্থায় নিহত তনুর পরিবারে ক্ষোভ বাড়ছে।
তনু হত্যাকাণ্ডের চার বছর পূর্তিতে আজ শুক্রবার কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মির্জাপুরে তনুর গ্রামের বাড়িতে বাদ জুমা মিলাদের আয়োজন করেছে পরিবার।
তনু হত্যা মামলায় তিন বছর সাত মাস আগে তদন্তকাজ শুরু করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন আহম্মদ। কিন্তু তিনি এখন পর্যন্ত আসামি শনাক্ত করতে পারেননি।
মামলার বাদী তনুর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘ভরসা এখন আল্লাহ যদি বিচার করেন! এর বাইরে আমি কোনো কিছুই দেখছি না। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করছেন না। তাঁর কারণে এই মামলা থমকে আছে।’
তনুর মা আনোয়ারা বেগমেরও ক্ষোভ তদন্তকারী কর্মকর্তার ওপর। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট জালাল উদ্দিন আহম্মদ মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান। এখনো তিনি এই মামলার কিছুই করতে পারেননি। আমি কতবার বলেছি, এক ব্যক্তি ও তাঁর স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করলেই এ হত্যাকাণ্ডের জট খুলবে। তাঁরাই আমার মেয়েকে ডেকে নিয়েছেন।’
তনুর মা আরও বলেন, ‘আমরা স্বামী ও স্ত্রী অসুস্থ। আমাদের দেখতে ছোট ছেলে বাসায় থাকে। মেয়েকে ঘিরে স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন চার বছর আগে ভেঙে গেছে। এখন মামলার তদন্ত হচ্ছে না। সরকার চাইলে আমি মেয়ে হত্যার বিচার পাব।’
কুমিল্লার সংস্কৃতিকর্মী খায়রুল আনাম বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তা কোনো কাজ করছেন না। আমরা হতাশ তাঁর প্রতি।’ তিনি আরও বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে কোনো কর্মসূচি নিইনি। পরে আমরা তনুর স্মরণে কর্মসূচি নেব।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন আহম্মদ এক বছর আগে প্রথম আলোকে যে বক্তব্য দেন, গতকালও প্রায় একই রকম কথা বললেন। তিনি বলেন, যাঁদের ডিএনএ নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর প্রোফাইল তৈরি করে ম্যাচিং করা হবে। এটি নিউইয়র্ক ও ইংল্যান্ডে করা হয়। তারপর আলামতের সঙ্গে মেলানো হবে। এখন পর্যন্ত ওই প্রতিবেদন আসেনি। মামলার তদন্তকাজের জন্য সব সময় বাদীর সঙ্গে দেখা ও কথা বলতে হয় না। বাদী ও তাঁর পরিবারের অভিযোগ ঠিক নয়।
২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে তনুর লাশ কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের পাওয়ার হাউসের অদূরে একটি ঝোপ থেকে উদ্ধার করা হয়। পরদিন বিকেলে তনুর বাবা কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। এ পর্যন্ত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তিনবার বদল হয়েছে। চতুর্থবার ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা বদল করে জালাল উদ্দিন আহম্মদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।