২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

সরাইলে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১, পুলিশসহ আহত ৩০

নিহত শাসমুল হক চৌধুরী।
নিহত শাসমুল হক চৌধুরী।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় হাওরবেষ্টিত পাকশিমুল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় পুলিশের সাত সদস্যসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।

নিহত ব্যক্তির নাম শামসুল হক চৌধুরী (৫৫)। আজ শুক্রবার সকালে পরমানন্দপুর গ্রামে নূর আলী ও আইয়ুব খাঁর লোকজনের মধ্যে এ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

পুলিশ ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে নূর আলী ও আইয়ুব খাঁর লোকজনের মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এ বিরোধের জের ধরে একাধিকবার সংঘর্ষ ও মামলার ঘটনা ঘটে। গতকাল সন্ধ্যার পর সরাইল থানার পুলিশ পরমানন্দপুর গ্রামে মামলার তদন্ত করতে গেলে তাঁদের উপস্থিতিতেই দুই পক্ষের লোকজন লাঠিসোঁটা, দা-বল্লম ও ইটপাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। আজ সকাল সাড়ে সাতটার দিকে উভয় পক্ষ ফের দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ায়। পুলিশ বলছে, এতে শামসুল হক চৌধুরীও আহত হন। দুপুর ১২টার দিকে সরাইল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নুরুল হকের নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫ জন পুলিশ সদস্য গ্রামে অভিযান চালান। বেলা দেড়টার দিকে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে আহত শামসুল হক চৌধুরীও পালানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এর কিছুক্ষণ পর তিনি মারা যান। শামসুল হক চৌধুরী আইয়ুব খাঁর পক্ষের লোক ছিলেন।

পুলিশ দাবি করছে, শামসুল হকের মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর পক্ষের লোকজন পুলিশের ওপর হামলা চালায়। তাদের ইটপাটকেল ও লাঠির আঘাতে সরাইল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মঞ্জুর আহমেদ, এসআই জাহিদুল ইসলাম; কনস্টেবল শাহাদত হোসেন, রেজাউল সরকার, রোকন উদ্দিন, আবদুল মালেক ও ইরফান সরকার আহত হন। তাঁদের জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষে আহত গ্রামবাসীর মধ্যে সাজেদা বেগম (৪২), হাবিবা বেগম (৩৭), রোজিনা বেগম (৩৮), তুহিন মিয়া (২৫), জামাল হোসেন (২৩), রিফাত মিয়া (২০) ও খলিল মিয়াকে (২২) জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত অন্যদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

পূর্বের ঘটনা
এলাকায় মাদক ব্যবসা, জুয়ার আসর ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ৮ ডিসেম্বর উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। এতে পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হয়। বসতবাড়ি, দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় উভয় পক্ষ থেকে থানায় মামলা হয়। পাশাপাশি ৯ ডিসেম্বর পুলিশ বাদী হয়ে পরমানন্দপুর গ্রামের ২২ জন গ্রাম্য মাতব্বরের বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে মামলা করে। পরে এই ঘটনার পরিধি আরও বাড়তে থাকে। গ্রামের অন্যান্য ‘বংশের’ লোকজনের মধ্যে এমনকি আশপাশের পাঁচটি গ্রামেও এ বিরোধের বিস্তার ঘটতে থাকে। এ মামলার প্রায় সব আসামি বেশ কিছু দিন কারাগারেও ছিলেন। পুলিশের ওই মামলাটি এখনো চলমান রয়েছে। মামলা করার পরও কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

পরমানন্দপুর গ্রামের সংঘর্ষস্থল পরিদর্শন করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান, সহকারী পুলিশ সুপার (সরাইল সার্কেল) মাসুদ রানা, সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদত হোসেন।

সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহাদত হোসেন আজ শুক্রবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। লাশ উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হচ্ছে। একবারে বিনা কারণে পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।