আইনের শাসন সূচকে গত এক বছরে বাংলাদেশের অবনতি হয়েছে। বিশ্বের ১২৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৫তম। দক্ষিণ এশিয়ার ছয়টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ চতুর্থ অবস্থানে। আজ বুধবার আইনের শাসন সূচক প্রতিবেদন-২০২০–এ এই চিত্র উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট (ডব্লিউজেপি) থেকে প্রতিবছর এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
বৈশ্বিক আইনের শাসন সূচকের গত বছরের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ১২৬টি দেশের মধ্যে ১১২তম অবস্থানে ছিল। সংস্থাটির ২০১৮ সালের সূচকে বাংলাদেশ ১০২তম অবস্থানে ছিল। অবশ্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এ বছর একই রয়েছে। এ ক্ষেত্রে নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ভারত বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। পেছনে রয়েছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। নিম্নমধ্যম আয়ের ৩০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ২১তম।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, এককথায় এটা বলা যায়, বাংলাদেশে আইনের শাসন নাই বলার শামিল। দুনিয়ার শতাধিক দেশ এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে শ্রেয়তর। এটা খুবই লজ্জাজনক। স্বাধীন বিচার বিভাগ, নির্বাচনে কমিশনের জবাবদিহি, দুদকের ভূমিকা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ সবকিছু মিলিয়ে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশের আইনের শাসনের ক্ষেত্রে একমাত্র শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার দিক থেকে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, দুর্নীতির অনুপস্থিতি, উন্মুক্ত সরকার, মৌলিক অধিকার, নিয়ন্ত্রণমূলক ক্ষমতার প্রয়োগ, নাগরিক ন্যায়বিচার এবং ফৌজদারি বিচারে বাংলাদেশের অবস্থার অবনতি হয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ মৌলিক অধিকারের দিক থেকে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ১২৮টি দেশের মধ্যে ১২২তম অবস্থানে রয়েছে। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে নিচে, অর্থাৎ ছয়টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের পরে রয়েছে তুরস্ক, ভেনেজুয়েলা, মোজাম্বিক, চীন, মিসর ও ইরান।
প্রতিবেদনে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে থাকা শীর্ষ তিন দেশ হচ্ছে ডেনমার্ক, নরওয়ে ও ফিনল্যান্ড। আর তলানিতে রয়েছে কঙ্গো, কম্বোডিয়া ও ভেনেজুয়েলা। আইনের শাসনের দিক থেকে গত এক বছরে সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে ইথিওপিয়ার। দেশটির এ ক্ষেত্রে ৫ দশমিক ৬ ধাপ অগ্রগতি হয়েছে। আর সবচেয়ে বেশি অবনতি হয়েছে মিসরের, দেশটির সূচকে ৮ দশমিক ৫ নম্বর কমেছে। অবনতি হওয়া অন্য দেশ হচ্ছে ক্যামেরুন। দেশটির এ ক্ষেত্রে সূচক নম্বর কমেছে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ।
১২৮টি দেশের ১ লাখ ৩০ হাজার খানায় জরিপ ও চার হাজার আইনজীবীর মতামত নিয়ে ডব্লিউজেপি এই সূচক ও প্রতিবেদন তৈরি করেছে। বাংলাদেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনার এক হাজার ব্যক্তির ওপরে তারা এ জন্য জরিপ করে। জরিপকারী সংস্থা ওআরজি কোয়েস্ট সংস্থাটির হয়ে জরিপটি করে।
এ ব্যাপারে ডব্লিউজেপির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উইলিয়াম এইচ নিউকম বলেন, ‘আইনের শাসন শুধু বিচারক ও আইনজীবীদের বিষয় নয়; এটি জনগণের ন্যায়বিচার, শান্তি ও সমান সুযোগ পাওয়ার মূল ভিত। তাই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা আমাদের সবারই দায়িত্ব এবং এ ব্যাপারে সবারই ভূমিকা পালন করা উচিত।’