শিক্ষকের থাপ্পড়ে কানের পর্দা ফাটল
সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার এনায়েতপুর থানার আওতাধীন গোপালপুর গ্রামে বন্ধন তালিমুল কোরআন নুরানিয়া ও হাফিজিয়া মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আমিরুল ইসলাম প্রথম শ্রেণির ছাত্র রিফাত হোসেনকে (৬) থাপ্পড় দিয়ে কানের পর্দা ফাটিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহত শিশুকে চিকিৎসার পর বাড়িতে আনা হলেও সে ওই কান দিয়ে কিছু শুনতে পারছে না বলে তার বাবা বুলবুল ইসলাম জানিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৩ বছর আগে গোপালপুরে বন্ধন তালিমুল কোরআন নুরানিয়া ও হাফিজিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে বছরখানেক আগে এলাকার এক শিশুকে মারধরের কারণে মাদ্রাসার এক শিক্ষককে বরখাস্ত করেছে পরিচালনা পর্ষদ। গত সোমবার মাদ্রাসায় লেখাপড়া অবস্থায় প্রধান শিক্ষক আমিরুল ইসলাম রুপনাই পূর্বপাড়া গ্রামের শিশু রিফাতের কানে থাপ্পড় দেন। তখন যন্ত্রণায় চিৎকার শুরু করে সে বাড়ি চলে আসে। এরপর রাতে অসুস্থ হলে কান দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। পরে সিরাজগঞ্জে একটি ক্লিনিকে চিকিৎসক শফিউল ইসলামের কাছে নেওয়া হয়। চিকিৎসা শেষে গতকাল বুধবার সকালে বাড়িতে আনা হয় শিশুটিকে।
শিশুটির বাবা বুলবুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার এই শিশুসন্তানকে বছরখানেক আগেও এক শিক্ষক মারধর করেছিলেন। পরে মাদ্রাসায় অভিযোগ দিলে সালিস বসিয়ে মীমাংসা করা হয়। আবারও আমার সন্তান রিফাতকে মেরে কান ফাটিয়ে দিয়েছেন মুহতামিম আমিরুল ইসলাম। আমি তাঁর বিচার চাই।’
এ ছাড়া ওই মাদ্রাসার শিক্ষকদের হাতে মারধরের শিকার হয়ে রুপনাই পূর্বপাড়া গ্রামের আসাদুল ইসলামের মেয়ে জুবায়দা (৬), রিপনের ছেলে আলিফ (৫), হারুনের ছেলেসহ (৮) ১৫–২০ জন ছাত্রছাত্রী মাদ্রাসা ছেড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জুবায়দার দাদা নওশাদ আলী অভিযোগ করে বলেন, ‘মাদ্রাসাটি এখন শিশুদের জন্য আতঙ্ক। কোমলমতি শিশুদের আদর করে পাঠদান করানো যেখানে রাষ্ট্রীয় আইন, সেখানে ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটছে বন্ধন মাদ্রাসাটিতে। আমরা সাধারণ মানুষ অভিযোগ করলেও তাঁরা আমলে নেন না। তাই প্রশাসনের কাছে দাবি, ওই মাদ্রাসার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য বারবার চেষ্টা করেও মাদ্রাসার শিক্ষক আমিরুল ইসলামের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে বন্ধন তালিমুল কোরআন নুরানিয়া ও হাফিজিয়া মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক বাবুল মোল্লা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের মাদ্রাসায় শিশুকে মারধরের ঘটনাটি খুবই বেদনাদায়ক। এর আগেও এরকম ঘটনার দায়ে এক শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে। শিক্ষক আমিরুল ইসলামের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ ব্যাপারে বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রহমত উল্লাহ বলেন, ঘটনাটি হৃদয়বিদারক। তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।