রাজশাহীতে সড়কে ট্রাকের সারি, ভোগান্তি
বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থার (বিসিআইসি) বাফার গুদামে ট্রাকের দীর্ঘ সারির কারণে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। গোডাউনের ভেতরে ঢোকার অপেক্ষায় একটি ট্রাককে অন্তত দুই দিন সড়কে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
ওয়ার্ডটির খোদ কাউন্সিলরই অভিযোগ তুলেছেন, সড়কে থাকা এসব ট্রাকের সিরিয়াল নির্ধারণের জন্য চাঁদা তোলেন ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। চাঁদার টাকা দেওয়ায় ট্রাকগুলোও সড়ক থেকে সরে না। অন্যদিকে বাফার গুদাম কর্তৃপক্ষ বলছে, এখন আমদানির মৌসুম হওয়ায় ট্রাক বেশি আসছে। তাই রাস্তাও অবরুদ্ধ হয়ে থাকছে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের বাস। ওয়ার্ডে ঢোকার দুটি রাস্তা। একটি শিরোইল কলোনি, আরেকটি শালবাগান এলাকা দিয়ে। শিরোইল কলোনি এলাকার প্রবেশপথটি দিয়ে সারের ট্রাক ঢোকে। বাফার গোডাউনে (সারের আপৎকালীন মজুত গুদাম) ট্রাক ঢোকানোর বিকল্প আর কোনো রাস্তা নেই। গোডাউন থেকে সার নিয়ে একই সড়ক হয়ে পরিবেশকদের ট্রাকও বেরিয়ে যায়। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ—এই তিন মাস বছরের প্রথম আমদানি মৌসুম। সারের ট্রাকগুলো সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী, যশোরের নওয়াপাড়া ও চট্টগ্রাম থেকে সার নিয়ে রাজশাহীতে আসে। এই সময় গুদামে ট্রাক প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগে পড়তে হয়।
সম্প্রতি ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকায় সারিবদ্ধভাবে ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। শিরোইল কলোনির সাড়ে তিন নম্বর গলির বাসিন্দা রহমত আলী (৬৫) রাস্তার অবস্থা দেখিয়ে বলেন, দাঁড়ানো ট্রাকের পাশ দিয়ে যখন আরেকটি ট্রাক ফিরে আসে, তখন রাস্তায় একজন মানুষ দাঁড়ানোরও জায়গা থাকে না। ট্রাকের সারির কারণে কোনো অসুস্থ মানুষকে নিয়ে রিকশা ঢুকতে পারে না। হেঁটে মহল্লায় ঢুকতে হয়।
সড়ক থেকে বাফার গুদামের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, ট্রাক ৩০০ টাকা করে চাঁদা তুলছেন দুজন শ্রমিক। তাঁরা নিজেদের নাম বলেন কালু ও হান্নান।
এ বিষয়ে বাবু মৃধা নামের একজন ট্রাকচালক বললেন, তিন দিন তাঁর ট্রাক সড়কেই আছে। ট্রাক কেন আগাচ্ছে না জানতে চাইলে বাবু জানান, ট্রাক থেকে সার নামিয়ে ডিলারের ট্রাকে তুলতে দেরি হয়। তাই গুদামে ট্রাকগুলোর বেশির ভাগই রাস্তায় অপেক্ষায় থাকে। বাবু মৃধার মতো আরেক ট্রাকচালক মোহাম্মদ সৌরভ জানান, গুদামে ঢোকার জন্য ট্রাকের সিরিয়াল নিতে শ্রমিক ইউনিয়নকে ৩০০ ও নৈশপ্রহরীর জন্য ৫০ টাকা করে দিতে হয়।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৌহিদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, চাঁদা দিয়ে সিরিয়াল নিতেও ট্রাকগুলোকে সড়কে অপেক্ষায় থাকতে হয়। সমস্যাটি ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা ও ট্রাফিকের উপকমিশনারকেও জানানো হয়েছে, কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, মানুষ মারা যাওয়ার উপক্রম হলেও সড়ক দিয়ে একটি অ্যাম্বুলেন্স ঢোকানোর উপায় থাকে না।
ট্রাক থেকে চাঁদা তোলার অভিযোগ স্বীকার করে রাজশাহী ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আক্কাস আলী বলেন, এই টাকা সরাসরি কেন্দ্রে চলে যায়। তাঁরা পান না। তাঁরা জেলার ভেতরে অন্য ৩৩টি পয়েন্ট থেকে চাঁদা তোলেন।
এ বিষয়ে বাফার গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, গুদামের পরিসর খুব ছোট। নতুন জায়গা খোঁজা হচ্ছে। পরবর্তী দুই বছরের
মধ্যে এখান থেকে গোডাউন অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হবে।