সিলেটে ব্যাহত হবে ইন্টারনেট সেবা
সিলেট নগরকে উন্মুক্ত তারহীন করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে সিটি করপোরেশন। এ লক্ষ্যে তারা নগরে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন করছে। অনেক এলাকায় মাটির নিচ দিয়ে লাইন স্থাপনের এই প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে।
এই অবস্থায় নগরে ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, তারা ইন্টারনেট সংযোগের তার টানানোর জন্য বিদ্যুতের খুঁটি ব্যবহার করে থাকে। সেই খুঁটি না থাকলে ইন্টারনেটের তার টানাতে পারবে না। আর মাটির নিচ দিয়ে তার নিয়ে যাওয়ার ব্যয় বহনের ক্ষমতা এসব প্রতিষ্ঠানের নেই। ফলে নগরে তাদের প্রায় ৬০ হাজার ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট গ্রাহক ভোগান্তিতে পড়তে পারেন।
সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, ভূগর্ভস্থ লাইন হয়ে যাওয়ায় বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণ করতেই হবে। এতে ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হলেই আইনগতভাবে তাদের কোনো দায়দায়িত্ব নেই। গত শনিবার এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ কথা বলেছে তারা।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, একটি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় তারা নগরে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করছে। ইতিমধ্যে নগরের হজরত শাহজালাল (রহ.) দরগাহ এলাকায় এমন লাইনের মাধ্যমে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সঞ্চালন সফল হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যুতের তার ভূগর্ভে স্থানান্তরের কাজ শেষ হয়েছে বেশ কয়েকটি এলাকায়। এর মধ্যে রয়েছে আম্বরখানা ইলেকট্রিক সাপ্লাই থেকে চৌহাট্টা মোড় এবং বন্দরবাজার এলাকার সিটি পয়েন্ট হয়ে সিলেট সার্কিট হাউস, চৌহাট্টা মোড় থেকে রিকাবিবাজার হয়ে নবাব রোড এলাকার বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বাগবাড়ি কার্যালয়, পূর্ব জিন্দাবাজার থেকে জেলরোড মোড় পর্যন্ত। চলতি মাসের শেষের দিকে এসব এলাকার বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণের কাজ শুরু করবে কর্তৃপক্ষ।
ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেটে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সরবরাহ করা কাজে যুক্ত আছে ছোট-বড় ৩৫-৪০টি প্রতিষ্ঠান। নগরের বিভিন্ন এলাকায় সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিগত মিলিয়ে প্রায় ৬০ হাজার গ্রাহক রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানের। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় নগরের জিন্দাবাজার এলাকায়। এই এলাকায়ও ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ সঞ্চালন স্থাপনের আওতাভুক্ত। তাই এখানকার বিদ্যুতের খুঁটিগুলোও অপসারণ করা হবে। আর খুঁটিগুলো সরিয়ে নেওয়া হলে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো সমস্যায় পড়বে।
ইন্টারনেট সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান লিংক থ্রির সিলেট শাখার প্রধান মাসুদ রানা প্রথম আলোকে বলেন, মাটির নিচ দিয়ে লাইন নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। বর্তমানে গ্রাহকদের তাঁরা মাত্র এক হাজার টাকায় ইন্টারনেট সংযোগ দিতে পারছেন। মাটির নিচ দিয়ে তার টানাতে হলে সেই খরচ ৫-৬ হাজার টাকায় উঠে যাবে।
ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিষয়টি নিয়ে দফায় দফায় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করেছে। গত দেড় বছরে তারা সিটি করপোরেশন ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ২৫-২৮টি সভা করেছে। এসব সভায় বিভিন্ন দাবিদাওয়া তুলে ধরে তারা। সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যুতের খুঁটি অপসারিত হলে সড়কবাতির খুঁটিগুলোতে সুশৃঙ্খলভাবে কয়েকটি ইন্টারনেট সঞ্চালন লাইনের ব্যবস্থা করার কথা সিটি কর্তৃপক্ষ বলেছিল। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ তারা আগের দেওয়া সেই আশ্বাস থেকে সরে এসেছে।
সিলেট নেট ব্রডব্যান্ডের পরিচালক ওয়াহিদুর রহমান বলেন, শুধু তাঁদের ব্যবসার স্বার্থে নয়, নগরবাসীর নির্বিঘ্ন ইন্টারনেট সেবা পাওয়ার সুবিধার্থেই বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা দরকার।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত শনিবার বিকেলে সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ সাধারণ নাগরিকদের অবগতির জন্য একটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে। তাতে উল্লেখ করা হয়, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নেওয়ার কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। কিছুদিনের মধ্যে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ লাইনের আওতায় আসা এলাকার বৈদ্যুতিক খুঁটি এবং তাতে থাকা সব তার অপসারণ করা হবে। খুঁটিতে থাকা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের তারগুলোও অপসারণ করা হবে। এতে ইন্টারনেট সংযোগ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েক দফা সভা করেও কোনো সমাধানে পৌঁছানো যায়নি। এ ব্যাপারে আইনগতভাবে সিলেট সিটি করপোরেশনের কোনো দায়দায়িত্ব নেই।
সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, নগরের বিদ্যুতের খুঁটিগুলোতে তারের জঞ্জাল রয়েছে। খুঁটিগুলো সরিয়ে নিয়ে জঞ্জাল কমবে। খুঁটিগুলো বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের। এতে সিটি করপোরেশনের কোনো দায়িত্ব থাকার কথা নয়। ইন্টারনেট সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো বহু বছর ধরে এসব খুঁটি ব্যবহার করে আসছে। এখন ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ লাইন হলে সেগুলো সরিয়ে নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।
এ বিষয়ে তারবিহীন বিদ্যুৎ উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক কে এম নাজিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড নিজেদের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ লাইনের কাজ শেষে হলে সড়কের পাশের বিদ্যুতের খুঁটিগুলো সরিয়ে নেওয়া হবে। ইন্টারনেট কেব্ল অথবা স্থানীয় কেব্ল অপারেটর সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো তাঁদের নিজ দায়িত্বে গ্রাহকদের লাইন সঞ্চালন করবেন।