নেত্রী পাপিয়ার বাসায় ৫৮ লাখ টাকা, ফোনে ভিডিও ক্লিপ
যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার বিপুল সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। আজ রোববার ভোররাত চারটার দিকে শামীমা নূর ও তাঁর স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে র্যাব এই সম্পদের হদিস পায়। এর মধ্যে টাকা পাওয়া গেছে ৫৮ লাখ ৪১ হাজার।
কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১–এর অধিনায়ক শাফি উল্লাহ বুলবুল বলেন, শামীমা নূরের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের কোনো সংগতি নেই। হোটেল ওয়েস্টিনে তাঁদের নামে বুকিং দেওয়া বিলাসবহুল প্রেসিডেনশিয়াল স্যুইট এবং ইন্দিরা রোডের ফ্ল্যাট থেকে র্যাব ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে। এর বাইরেও উদ্ধার হয়েছে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি পিস্তলের ম্যাগাজিন, পিস্তলের ২০টি গুলি, পাঁচ বোতল দামি বিদেশি মদ, পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি চেকবই, কিছু বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি ভিসা ও এটিএম কার্ড।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অনুসন্ধানে র্যাব শামীমা নূর এবং তাঁর স্বামী মফিজুর রহমানের মালিকানায় ইন্দিরা রোডে বিলাসবহুল দুটি ফ্ল্যাট, নরসিংদীতে দুটি ফ্ল্যাট ও দুই কোটি টাকা দামের দুটি প্লট, তেজগাঁওয়ে এফডিসি ফটকের কাছে কার এক্সচেঞ্জ নামের গাড়ির শো রুমে এক কোটি টাকার বিনিয়োগ ও নরসিংদী জেলায় ‘কেএমসি কার ওয়াশ অ্যান্ড অটো সলিউশন’ নামের প্রতিষ্ঠানে ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগের হদিস পেয়েছে। এ ছাড়া শামীমা নূর পুলিশের পরিদর্শক পদ ও বাংলাদেশ রেলওয়েতে বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার নামে ১১ লাখ টাকা, কারখানায় অবৈধ গ্যাস–সংযোগ দেওয়ার কথা বলে ৩৫ লাখ টাকা, সিএনজি পাম্পের লাইন করে দেওয়ার কথা বলে ২৯ লাখ টাকাসহ ঢাকা ও নরসিংদী এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা করে কোটি টাকা উপার্জন করেছেন বলেও দাবি করেছে র্যাব।
এর আগে গতকাল শনিবার শামীমা নূর, তাঁর স্বামী মফিজুর ও তাঁদের দুই সহযোগী সাব্বির খন্দকার ও শেখ তাইয়েবাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাঁদের বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, অনৈতিক কর্মকাণ্ড, জাল নোট সরবরাহ, রাজস্ব ফাঁকি, অর্থ পাচারসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় তাঁদের কাছ থেকে সাতটি পাসপোর্ট, ২ লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার ৬০০ টাকার জাল নোট, ৩১০ ভারতীয় রুপি, ৪২০ শ্রীলঙ্কান রুপি, ১১ হাজার ৯১ ইউএস ডলার ও সাতটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়। তাঁদের কাছে বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলিও পাওয়া যায়।
র্যাব-১–এর অধিনায়ক শাফি উল্লাহ বুলবুল বলেন, গত বছরের ১২ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে শামীমা-মফিজুর দম্পতি ওয়েস্টিনের কয়েকটি বিলাসবহুল কক্ষে অবস্থান করেন। এ জন্য তাঁরা পরিশোধ করেন ৮১ লাখ ৪২ হাজার ৮৮৮ টাকা ৩১ পয়সা। এই অর্থের উৎস কী, সে ব্যাপারে সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি তাঁরা। হোটেল ওয়েস্টিনসহ পাঁচ তারকা বিভিন্ন হোটেলে নারীদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত করার অভিযোগ আছে শামীমার বিরুদ্ধে। তাঁর মুঠোফোন থেকে বেশ কিছু ভিডিও ক্লিপও উদ্ধার হয়। ভিডিও ক্লিপগুলো যেকোনো নারীর জন্য অমর্যাদাকর।